পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'HOg বিভূতি-রচনাবলী অনেক রাত হয়েছে। এবার একটু খুলে হত না ? সারাদিন টাে টাে করে বেড়িয়েছেন ব্যাণ্ডেলে । এই সাঁইথিয়াতে একবার তিনি রিলিফে এসেছিলেন মনে আছে, বহুকাল আগে । তখন মুক্ত বলে দিয়েছিল, রোজ একখানা করে চিঠি দিও। আটখানা পোস্টকার্ড সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ মনে পড়ে গেল কথাটা । সাঁইথিয়াতে তখন বিধুভুষণ রায় ছিলেন স্টেশনমাস্টার। তার বাড়ীতেই খাওয়া-দাওয়া হত। বিধুবাবুর ছেলে সদানন্দ তার চেয়ে কিছু ছোট, সদানন্দ ও তিনি একসঙ্গে তাস খেলতেন কাছাকাছি একজন ভদ্রলোকের বাইরের ঘরে বসে । একবার একটা পাকা কঁঠাল বিধুবাবু নামিয়ে নিলেন গার্ডের গাড়ী থেকে । কঁঠালট আধপচা । সদানন্দ বললে—দাদা, মা বলেছেন, ক্ষীর-কাটল খাবেন ওবেলা । কেশব বললেন,—দূর। ওর বীচি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না— —আমি বলছি পাওয়া যাবে । –কথখনো না । —বাজি । —কি, বলে ? —বোঁদিকে তিন দিন চিঠি দিতে পারবেন না দাদা? অত কি টেবিলে বসে লেখেন ? ক্ষুদে ক্ষুদে লেখাতে একখানা পোস্টকার্ডে একখানা খামের কাজ করে নেন। ফেলবেন বাজি ? রাজী হন নি কেশব । মুক্তকে চিঠি না দিয়ে থাকা ? অসম্ভব। সে এক সেই ব্যাণ্ডেলের সেই ছোট্ট বাসাতে বসে তার জন্তে দিন গুণছে, রোজ ঘোড়ানিম গাছটার তলায় পিওনের আবির্ভাবের অপেক্ষায় বসে থাকে খাওয়া-দাওয়ার পর জানলাটিতে। তাকে তিনদিন চিঠি না দিয়ে বঞ্চিত করতে পারবেন না । তা কখনই হয় না । সেসব দিন কি খুব দূরে চলে গিয়েছে ? বডড পেছনে ফেলে এসেছেন কি ? স্বপ্নের মত মনে হল—আবছায়া আবছায়, সব মিলে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মুক্তকেশী.সান্ট:র্যাণ্ডেল-তিনপাহাড়। প্রথম যৌবন-তিয়াত্তর বছরের বাৰ্দ্ধক্য ! স্বপ্ন। কাদছেন নাকি আবার তিনি ?•••ছ, তাই তো, কেটের গলার কাছটায় ভিজে । না, না, কাদবার কি আছে ? বুড়ো বয়সে চোখ পানসে হয়ে যায়। কঁদিবেন কেন তিনি ? —গাঙ্গুলী বাবু, ঘুমোলেন? অমন ভাবে শুয়ে কেন? শরীর খারাপ হয় নি তো ? পঞ্চানন চক্রবর্তী ক্রু। চলন্ত গাড়ীর দরজা খুলে ঢুকলো। সাঁইথিয়া থেকে এইমাত্র ট্রেণ ছেড়েছে । কেশব যেন চমকে উঠলেন। বললেন—না তো ! —একটু চা খেয়ে নিন আগের স্টেশনে । —এত রাত্রে চা ? পাগল হয়েছ ভায়া ? আমি চ খাইনে এত রাত্তিরে। তুমি খাও। যুমুবে না ?