পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ψ)δίγ' বিভূতি-রচনাবলী ছিলেন, কলকাতায় চাকরি করতেন—তিনিই বিংশ শতাব্দীর এই আশ্চৰ্য্য যন্ত্রটি মামার বাড়ীর গ্রামে সৰ্ব্বপ্রথম আনলেন কলকাতা থেকে । কলের গান ! কলের গান ! সতীশ মামার ছেলে যাদু বললে—এই কামু, চল—গ্রামফনো দেখে আসি— —সে আবার কি ? —গ্রামফনো । কলের গান । হরিজ্যাঠা এনেছেন— দৌড়ে গেলাম ছুটে । একটা কাঠের বাক্সের ওপর একটা চোঙ বসানো । চোঙের ভেতর থেকে একেবারে অবিকল মামুষের গলার গান বেরিয়ে আসচে ! একটা ছোট ছেলে বললে—ওর মধ্যে কে আছে ? —কে আবার থাকবে ? —তবে গান গায় যে ? —কলে গান হচ্চে । একে বলে কলের গান । প্রাচীন আমলের বৃদ্ধ রামতারণ চক্ৰবৰ্ত্ত লাঠি ঠুক্‌ ঠক্‌ করতে করতে এসেছিলেন এই অদ্ভুত ব্যাপারটা দেখতে । তিনি সেকালের আমলে নীলকুঠির দেওয়ান ছিলেন, নীলকুঠির সায়েবদের অনেক ঘোড়া, টমটম, বন্দুক দেখেচেন–কিন্তু কলের গান কখনো দেখেনও নি, শোনেনও নি! এগিয়ে বসে ভারী গলায় বললেন—হরি বাবাজি, এর নামড়া কি বল্লে ? ~~শগ্রামোফোন । —মানে কি ? —মানে—মানে হল কলের গান । রামতারণ চক্ৰবৰ্ত্তা আমার বালোই দেহরক্ষা করেছিলেন, শুধু কলের গান ছাড়া আধুনিক যুগের অনেক আশ্চৰ্য্য জিনিসের কিছুই দেখে যেতে পারেন নি । * সেই অনাদি-মামাদের বড় বাড়ী পড়ে আছে জঙ্গলাবৃত হয়ে । দরজা খসে পড়েচে, ওপরের ঘরের জানলা ঝুলে বাতাসে এদিক ওদিক করচে, ছাদের ওপরে এতবড় অশ্বখ গাছ গজিয়েচে যে তার তলায় বসে রাখাল বঁশি বাজাতে পারে । অনাদিমামা বৃদ্ধ হয়েচেন, তিনি কাশী থাকেন, র্তার ছেলেরা কেউ জৌনপুরে, কেউ এলাহাবাদে কাজ করেণ। অজ পাড়াগায়ের পৈতৃক ভিটের নাম মুখেও আনে না । সেই রামতারণ চক্ৰবৰ্ত্তীর দোতলা প্রকাও বাড়ী ও পূজোর দালান পড়ে আছে, চামচিকে ও বাদুড়ের বাসা কড়ির গায়ে, ভাঙা মেঝেতে গোখরো সাপের বাসা । ও সব বাড়ীর ত্রিসীমানায় কেউ খায় না সর্পাঘাতের ভয়ে । দু' তিনটি এ গায়ের নীচ জাতীয় লোকে অসাবধানে চলাফেরার ফলে সাপের কামড়ে জীবনও দিয়েচে । বড় মামাদের বাড়ীটার কি দশা হয়েচে । এই বড় মামা কাজ করতেন পশ্চিমে কোথায় যেন । আমার ছেলেবেলায় তিনি গ্রামের