পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী ©8) বয়েস হয়েচে তার, এর কম হবে না কোনো হিসেবেই । বড় দিদিমাকে দেখতে গেলাম। সেই মস্ত বড় বাড়ীর মধ্যে কুঁচকাটার জঙ্গল বঁচিয়ে অতিকষ্টে ঢুকলাম। সরু পায়ে-চলার পথ কে যত্নে বাট দিয়ে রেখে দিয়েচে । o জ্যোৎস্না উঠেচে । নব ময়রার যে বাড়ীতে আমাদের বালাকালের পাঠশালা বসতো, সে বাড়ীর জঙ্গলের মধ্যে শেয়াল ডেকে উঠলো । আমি বাড়ীর মধ্যে ঢুকে দেখি এক মাজ-ভাঙা বুড়ী তুলসীতলায় পিদিম দেখিয়ে আস্তে আস্তে ভাঙা রোয়াকের ওপরকার কালমেঘের জঙ্গল মাড়িয়ে বারান্দার দোরের দিকে যাচ্চে । —ও বড়দিদিমা ! —কে ? বুড়ী পেছন ফিরে দেখলে। আমায় চিনতে পারলে না । ( চেনা সম্ভবও ছিল না অবিশুি ) । —কে তুমি ? —আমি কানাই । সীতানাথ চকত্তির ভাগ্নে আমি | বুড়ী থমকে দাড়িয়ে আমার মুখের দিকে চাইলে । অবাক হয়ে গিয়েচে যেন। পরেশনাথের চেয়ে এর মুখের ভাব অনেক বেশি সজীব ও পরিস্ফুট। প্রাণ এখনো মরে নি। —ও, তুমি সত্যভামার সেই খোকা ! কত বড় হয়ে গিয়েচ । এসো এলো, বলে। এসো, বারানদায় এসে বসো | বুড়ী পিদিম রেখে এসে হরিনামের মালা হাতে আমার কাছে বসলো | বল্লাম—দিদিম, এ বাড়ীতে কতদিন এক আছেন ? —আজন্মে । তিনি মরে গিয়ে এস্তক । --আচ্ছা, আপনার ছেলেপিলে হয়নি দিদিমা ? —-একটি মেয়ে হয়েছিল, ন'মাসের হয়ে মারা যায়। তারপর সেই শহরকে মানুষ করে ছিলাম— 酸 —শত্তর কে ? —তার নাম ছিল রামলাল । —আমি বুঝতে পেরেচি, আমার ছেলেবেলায় তিনি মারা যান। বড় দিদিমা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন । বল্পেন—কেউ নেই ভাই । আজ আমার বিয়ে হয়েচে কতকাল তা মনেও নেই। নবছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল । আমার সতীন, রামলালের মা তখন আঠারো উনিশ বছরের। রামলীল হল, আমার কি ন্যাওটো ছিল ! হাতে করে মানুষ করেছিলাম। ওর মা তো তার ঝক্কি নিতো না। - —এখন আপনার বয়েস কত হল ?