পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী \©&© ওরা আমায় যে কাজের জন্যে রেখেচে, সে কাজ কোনদিনই তো হবে না এদের । রামলালকে বল্লাম—আমি কি করবে, বলুন ? —-কামকা-ওয়াস্তে ঘাবড়াও মাং, বহুৎ কাম মিল যায়গা | —সাবিত্রীকে কেন পড়াই না ? —কি পড়াবে ? —ইংরেজি, বাংলা । —ই, ও হোনেসে বহুৎ আচ্ছা । পঢ়াও । অনন্সয়া বাঈ খুব খুশি । মেয়েকে খুব সাজিয়ে গুছিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিলে । আমি মন দিয়ে তাকে পড়াতে শুরু করি। মুখে মুখে ইতিহাস শেখাই, গ্রহনক্ষত্রের কথা বলি । সাবিত্ৰী তেমন বুদ্ধিমতী নয়, পড়াশুনের দিকে মন নেই তার। অনিচ্ছার সঙ্গে বসে বসে কথা শুনে যায়, শুধু ঘাড় মডে। ওদের একটি ছেলের একবার অস্বথ হয়েছিল, রাচি থেকে ডাক্তার নিয়ে এলাম, ওষুধ নিয়ে এলাম । নানারকম চেষ্টা করি ওদের সেবা করতে | সারা বছর এইভাবে কেটে গেল । ভরহেচ, নগরের জনসংখ্যা আমি এসে সেই যে বাড়িয়েছিলাম, তারপর আর বাড়লো না । একদিন অপূৰ্ব্ব জ্যোৎস্নারাত্রে নগর-তোরণের পাশে প্রস্তর-বেদিকায় বসে আমি এক-এক, এমন সময় দেখি, অনস্বয়া বাঈ প্রশস্ত রাজপথে পদচারণা করতে-করতে তোরণের কাছে এসে, আমায় দেখে থমকে দাড়িয়ে থতমত খেয়ে গেল । আমি বেদী থেকে উঠে দাড়িয়ে নমস্কার ক'রে বললাম—মৗসীমা ? অনসূয়া হিন্দীতে বললে—এখানে একা বসে যে ? –এই একটু বসে আছি। —খাওয়া হয়েচে, পেট ভরেচে তো ? —দেখুন তো! আপনি প্রায়ই অমন বলে পাঠান, আমার লজ্জা করে । —এখানে আছে, তোমার মা নেই কাছে, আমাদের দেখতে হবে না ? —মায়ের জাত আপনারা। ঠিক কাজ আপনাদের । —সাদি করোনি কেন ? —কি খাওয়াবো বলুন ? আমি তে আপনাদের দয়ায় খেয়ে বেঁচে আছি। —বেট, এ-রকম কথা বোলো না, শুনলে কষ্ট হয়। তুমি কি আমাদের পর ? আমাদের ঘরের একজন ৷ —সে আপনাদের দয়া । —কিছু না বেটা । তোমাকে সাদি দিয়ে এই ভরহেচ, নগরে বাস করাবে। আবার সেই আকাশকুস্কম। আবার ভরহেচ, নগরের কথা। ওদের মন কি স্বন্দর ! কত জায়গায় গেলাম, এদের মত মন কোথাও পেলাম না। অনস্বয়া বাঈ হেসে চলে গেল,