পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী 8שס —সে তুমি বোঝে । তুমি এত জানে, এত বোঝে, তাহলে নিশ্চয় এটাও জানে । —কাল সকালে দেখবো । --আমাকে ওভারটাইমের মাইনে দিতে হবে হাজত-বাসের জন্যে তা ব’লে দিচ্ছি। তোমাদের গাড়ীতে খাটতে এসেছি বলে চোরের মত হাজত-বাস করতে আসি নি তা বলে দিচ্ছি। —নিও, দেবো। এ বিপদ থেকে উদ্ধার পাই আগে । মশায় খেয়ে ফেলে দিলৈ ! --বুদ্ধি তোমার বড্ড সরু কি ন! একশোবার বলি নি ? পরদিন সকালে প্রতুল অনেক কৌশলে পুলিশের হাত থেকে রেহাই পেয়ে এলো। খরচ বাদে নগদ চল্লিশ টাকা লাভ এই একদিনে । সেই থেকে প্রতি হাটবারে রাণাঘাট যাতায়াত করে প্রতুল বাস নিয়ে । পুলিশের কলকাটিতে সব দিক ঠাণ্ড আছে । ওদের হাজত-বাস আর করতে হয় না। আর একটা গোলমাল খুব শীগগির বাধলো । সেটা খুব মারাত্মক রকমের গোলমাল । মাস দুই পরে যখন চল্লিশ জন গড়ে যাত্রী হচ্ছে, মালপত্রও ভালো হচ্ছে—সেই সময় একদিন হরিপদ বল্পে—প্ৰতুলদা, এ-রাস্তায় বাস চলবে না । লজঝড় রাস্তা, টায়ার কতবার বদলাবে ? এঞ্জিন খুব ভালো তাই, আমেরিকার এঞ্জিন, কিন্তু এ ধাক্কা কতদিন সইবে ? বর্ষা পড়ে গিয়েছে, একবার দেখে এসো একদিন । প্রতুল একদিন নিজের চোখে দেখতে গেল। বাবা, এই রাস্তার অবস্থা ! ওর চোখ কপালে উঠলো আর কি ! কে জানতো বর্ষার সময়ে রাস্তা এমন হবে ? এখানে গৰ্ত্ত, ওখানে একেবেঁকে চালাতে গিয়ে একদিন হরিপদ এক গাছের গায়ে গাড়িম্বন্ধ, মারলে তাল । বনেট বেঁকে দুমডে গেল। কারবুরেটরের ভীষণ ক্ষতি হল। হরিপদর বা হাতখান জখম হল। আরও মুশকিল। বোঝাই গাড়ী, সেদিন ছিল বেলের হাট, পটল ও বেগুনের বাজর। ছিল কুড়িটা। গরুর গাড়ীতে রাণাঘাট নিয়ে যাওয়ার খরচ বাইশ টাকা দিতে হল, টিকিট সদ ফেরৎ দিতে হল, হরিপদকে মিশন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হল । সবমুদ্ধ একশো ন’ টাকা লোকসান এদিকে, বনেট-ও কারবুরেটরের প্রশ্ন বাদ দিয়ে। দু’শো আড়াইশো টাক সবষদ্ধ । রাম চায্যের স্ত্রী সব শুনে বল্লেন—আমার সময় খারাপ পড়েছে। তোমাদের কোনো দোষ নেই প্রতুল। নইলে হরিপদই বা গাছের গায়ে তাল মারতে যাবে কেন ? সে তো পুরনে ড্রাইভার। রাস্তা খারাপ, আগে দেখনি কেন ? —তখন এমন ছিল না সত্যি বলছি খুড়ীমা । বর্ষার আগে বুঝতেই পারিনি । —কি করবে এখন ? ও রাস্তায় আর গাড়ী চালিও না । গাড়ী ছ’খানা ভাঙলে একেবারে সৰ্ব্বশ্বাস্ত হতে হবে । _সইসেন্স নেওয়া রুট বন্ধ করা ঠিক হবে খুড়ীমা ? বেশ প্যাসেঞ্জার হতে শুরু হয়েচে । এখন যদি ছেড়ে দিই— o