পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী \o সে যদি জরে না ভুগতো তবে অনেকদূর চলে যেতো এতদিনে—একবার সে গরমিন্টোর শিমূল গাছের আবাদ দেখতে গিয়েছিল, সেখানে তার কয়েকদিন আগে গরমিণ্টে এসেছিল আবাদ তদারক করতে। গরমিণ্টে মিঠাই ফেলে গিয়েছিল, বিলাইতি মিঠাই, লাল নীল রং, কাগজে মোড়া । সে কুড়িয়ে প্রথমে ভাবলে, কি এগুলো ? আবাদের চৌকিদার দেখে বল্লে—ও বিলাইতি মিঠাই । খেয়ে লাও— সে মুখে দিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিল। অমন সে জীবনে কখনো খায়নি। গরমিণ্টোর মিঠাই ভারি চমৎকার লাগে খেতে । এ সব ফেলে সে চলে যেতে যে দেশে ঐ রকম আশ্চৰ্য্য জিনিস আছে, কিন্তু বাবার জন্য মন কেমন করলে দূরে কি করে যাওয়া হয় ? তা ছাড়া, শরীরে অস্থখ তো লেগেই আছে, যে জন্যে সে গাছের ওপরে উঠতে পারে না, কঁড়ি ধরতে পারে না, পাহাড় ডিঙিয়ে বড় ঝোপের বনে যেতে পারে না । কিন্তু বাবার মত সে নাম-করা লোক হতে চায়, বাবার মনে মুখ দিতে চায় । বর্ষার বাজরাক্ষেতে যেমন প্রতি বছর পাহাড় থেকে বন্তহস্তিযুথ নামে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না । ঘাটোয়ালী কাছারি থেকে টেটরা দিয়ে গেল, এবার মস্ত বড় পাগলা হাতি নেমে বন্য গ্রামগুলির অত্যন্ত ক্ষতি করচে। যে হাতী মারতে পারবে, তাকে একশো টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে । গ্রামের মধ্যে জোয়ান শিকারীর দল চঞ্চল হয়ে উঠলো, কিন্তু কেউ কারো সঙ্গে পরামর্শ করে না, পাছে তার মতলব আপরে আত্মসাৎ করে । টেমন সাঁওতাল বনকাটি গ্রাম থেকে এসে একদিন সবাইকে ডেকে বল্পে—এ বছরের হাতীটি তুর মারতে লারবি। সবাই বল্লে—কেনে হে ? 鲁 —উ মাদী হাতী আছে । মারতে লারবি । একজন যুবক শিকারী বল্লে—কাড় টেনে হাতী মারা নেই যাবে? তুমি শিখাতে এসেচ ? মাদী হাতীটা কি হাতী লয় ? * —ই সে হাতী লয়। দেখে লিবি আমার কথা । এ বছর দু'তিন আদমি মরবেই সব বস্তির। ঘাটোয়ালী কাছারির লোক টাকা দেবে সিধা বাত শুনে ? তা দিবে না। দেখে লিবি ৷ ঢেমন বড় শিকারী এ অঞ্চলের ৷ এক বাঘ মেরেচে কঁাড় দিয়ে। বিষাক্ত ফলা চালিয়ে হাতী মেরেচে। তার কথা অগ্রাহ করবে এমন লোক এ দিকের কোন গ্রামে নেই। মাগনিরাম সেখানে উপস্থিত ছিল । সে চেমন সাওতালের স্বগঠিত চেহারার দিকে চেয়ে দেখলে প্রশংসার দৃষ্টিতে। মরুদ বটে একজন ? আজ তার যদি জর না হত, সেও অমনি