8०९ বিভূতি-রচনাবলী
দাদার শ্রাদ্ধ-শাস্তি রামগতি পল্লীগ্রামের হিসেবে ভালোভাবেই করলেন । লোকে তাকে ভালোই বল্পে। এতদিন দাদা মামলা-মোকদ্দমা করে ছোট ভাইকে নাস্তানাবুদ করেছিল, অনেক ফাকি দিয়েছিল বুড়ে । রামগতি ভালো প্রতিশোধই নিয়েচে ।
শ্ৰাদ্ধ-শাস্তি চুকে যাওয়ার পরে একদিন রামগতি তার চাকর হারাধনকে ডেকে বল্পেন— হারাধন, একটা কোদাল নিয়ে চল তো আমার সঙ্গে দাদার বাড়ী ।
—কেন গো ছোটবাবু ? কি হবে কোদাল ?
—চল না বলচি ।
দাদার বাড়ীর উঠোনে পৌঁছে হারাধনকে বল্পেন—এই জবাগাছের তলায় খোড় দিকি
ভালো করে ।
—কেন ?
—দাদা বলে গিয়েছিল, টাকা পোতা আছে ওর তলায় ।
—তুমিও যেমন পাগল ! টাকা পুতে রেখে গিয়েচে তোমার জন্তি ?
—তুই খোড় দিকি ভালো করে । বকিস্ নে ।
হারাধন এ সংসারের বিশ্বাসী পুরনো চাকর । অনেকদিন থেকে রামগতির কাছে আছে । মনিবের ওপর অনেক সময় সে হুকুম চালায় । ভালোমান্তষ রামগতি হাসিমুখে সহ করে ।
অনেকক্ষণ ধরে খোড়া হল, কিছুই পাওয়া গেল না। রামগতি বল্পেন—উত্তর দিকে খোড় দিকি—
আবার খানিক পরে বল্পেন—পেলি নে ? আচ্ছা, দক্ষিণ দিকে খোড়—
ছঘণ্টা খোড়াখুড়ির পরেও কিছু পাওয়া গেল না। রামগতি এই টাকার ওপর নির্ভর করে দাদার শ্রীদ্ধে কিছু বেশী খরচ করে ফেলেছিলেন । হারাধন বল্লে—তখুনি বল্লাম ছোটবাবু, ও—বড়বাবুর আর খেয়ে দেয়ে কাম নেই—আপনার জন্সি টাকা পুতে
রেখে যাবে !
—তাই তো ! বল্পে যে দাদা মৃত্যুর কিছু আগে ?
—অমন বলে। রোগের সময় কে কি বলে তাই কি আর দেখতি গেলি চলে ?
এই ঘটনার কিছুদিন পরে রামগতির মৃত্যু হল । রামগতির একমাত্র শিশুপুত্রের বয়স তখন
মাত্ৰ পাচ বছর। s
রামগতির বিধবা পত্নী ছেলেটিকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় তার বাপের বাড়ী চলে গেল। যাবার সময় প্রতিবেশীদের বাড়ী বাসন-কোসন, পিড়ি, খাট, বালতি রেখে চলে গেল ।
চুয়াডাঙ্গায় রামগতির স্ত্রীর বাপের বাড়ীতে শুধু তার এক ভাই ছাড়া আর কেউ ছিল না। ভাইটি মূর্খ এবং গুলিখোর। অবস্থা ভাল নয়। অতিকষ্টে সংসার চলে।
গরুর গাড়ী এসে দাড়াতেই রামগতির স্ত্রীর ভাজ উকি মেরে বল্লে—কে গা ? ওম, এ যে ঠাকুরবি ! আহ, এসো এসো—এ বুঝি খোকন ? এসো বাবা—
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪২২
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
