পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9 aw বিভূতি-রচনাবলী বিরাট পুষ্পবৃষ্টি হইয়া গিয়াছে, তাহাবুই চিহ্ন। একগাছা মালা কেন সংগ্ৰহ করিয়া আনিলাম না ভগবানের জন্য, ভাবিয়া মায়া হইল সে বেচারীর উপর । সংকীর্তনের দল কি মালা আনিয়াছে ? আনিতে পারে । ছড় ছড় করিয়া লোক নামিয়া গাড়ী খালি হইয়া আসিল । বাঙালী, বিহারী, মাদ্রাজী, পাঞ্জাবী, পাঠান যাত্রীর দল নিজের নিজের জিনিসপত্র কুলীর মাথায় চাপাইয়া, ব্যাগ ও টিফিনক্যারিয়ার নিজের নিজের হাতে ঝুলাইয় গেটের দিকে চলিয়াছে। স্থানে স্থানে স্ত,পাকার বাক্স ও হোল্ড-আল-বাধা বিছানাকে কেন্দ্র করিয়া মেয়েরা বালক-বালিকাসহ দাড়াইয়া আছে, সঙ্গের পুরুষেরা কুলীদের সঙ্গে দরদস্তুর করিতেছে । খুব একটা ব্যস্ত-ত্ৰস্ততার ভাব চারিদিকে । কিন্তু—ভগবান কই ? ফাস্ট ক্লাস দেখিলাম, সেকেণ্ড ক্লাস দেখিলাম । দুই তিনটি বাঙালী পরিবার একটি সেকেণ্ড ক্লাসের কামরা হইতে নামিয়া কামরার সামনেই মালপত্র নামাইয়া জটলা করিতেছে । এঞ্জিনের সামনে ফাস্ট-সেকেণ্ড ক্লাস কম্পোজিট বগিখানিতে মিলিটারি বোঝাই । তাদের সঙ্গে বহু মালপত্র । কুলিরা ঠেলাগাড়ী আনিয়া মাল বোঝাই করিতেছে। এখানেও তো ভগবানের আসিবার কথা নহে। সংকীৰ্ত্তন পার্টি কীৰ্ত্তন থামাইয়াছে। তাদের কাছে গিয়া বলিলাম—মশায়, ভগবানকে খুজে পেলেন ? উহাদের একজন বলিল—না মশায়, আমরাও তো খুজচি । —পেছন দিকটা দেখে এসেচেন ? —সব দিকে দেখা হয়ে গিয়েচে । —ইণ্টার ক্লাসটা দেখা হয়েচে ? কোনো ক্লাসই বাদ দিই নি আমরা । কোথাও তো তেমন কোনো লোককে দেখলাম না মশাই। আমরা বাগবাজার গৌড়ীয় মঠ থেকে আসচি। আরও খানিকটা অপেক্ষা করিবার পর আমি নিরাশ মনে প্ল্যাটফর্ম হইতে বাহির হইয়া রাস্তায় পড়িলাম। কি মনে করিয়া ট্রাম না ধরিয়া হাওড়া পুল ধরিয়াই চলিয়াছি, হঠাৎ চোখে পড়িল একজন লোক পুলের মাঝামাঝি রেলিং ধরিয়া অন্যমনস্ক ভাবে গঙ্গার জলের দিকে চাহিয়া আছে । আমি পাশ দিয়া যাইতেছি, লোকটি হঠাৎ আমার দিকে ফিরিয়া চাহিল। লোকটির চেহারায় কি যেন ছিল, দীন-দুঃখীর মত অকিঞ্চন ভাব মুখে, অথচ চোখ-দুটিতে অতলস্পর্শ গভীরতা ও বালকোচিত সারল্য একসঙ্গে মাখানো। আকৃষ্ট হইয়া পড়িলাম ওর এই মুখভাবের আশ্চৰ্য্য পবিত্রতা ও সরলতায় । বলিলাম—কোথায় যাবেন ? লোকটি গঙ্গার দিকে হাত দিয়া দেখাইয়া বলিল—এই নতুন পুল বুঝি ? 一苓11