পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8$२ বিভূতি-রচনাবলী —দেখাশুনো করে কে ? ছেলেরা ? —ছেলে নেই। তিনটি মেয়ে । বিয়ে থাওয়া হয়ে গিয়েচে, শ্বশুরবাড়ী ঘরকন্ন করচে । কাজেই আমার কোনো পিছুটান নেই মশায় । কেন বেড়াবো না । নানারকম অভিজ্ঞতা হয়েছে দেশবিদেশে বেড়িয়ে । একটা বড় অভিজ্ঞতা হয়েচে কি জানেন, ভগবানের নামের অনেক গুণ । বড় মজা | —কি রকম ? —সেবার চৈত্র মাসেই বড় গরম পড়ে গেল। কাটোয়া স্টেশনে নেমে দু-ক্রোশ তফাতে অজয় নদের বঁধি, বেশ চওড়া, দুধারে কাশবন । সেই বাধ বেয়ে আরও ক্রোশ-দুই গেলে তিলজুড়ি গায়ে আমার এক শিষ্যের বাড়ী । সেখানেই যাচ্চি। যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। নির্জন স্থান, মানুষজন নেই কোনোদিকে—নিকটবৰ্ত্তী গ্রামও দু ক্রোশ দূর । এমন সময় মশায়, দেখি যে চারজন ষণ্ডামার্কা জোয়ান লোক বী-দিকের কাশবন ঠেলে বাধের উপর এসে উঠলো। হাতে তাদের মোটা মোট বাশের লাঠি—আমার দিকে এগিয়ে এসে সামনের লোকটা দুহাতে লাঠি তুললে আমার মাথা লক্ষ্য করে । মাথায় লাঠি মারে মারে—আর বেশি দেরি নেই! ভবলীলা সাঙ্গ হল, হল কি, হয়ে গিয়েছে—এমন সময় আমার মনে কে যেন কি বলে দিলে, আমি লোকটির দিকে চেয়ে বল্লাম—বাপু হে, হরিনাম করে । হরিবেলি বলে । কেন আমাকে খুন করে ব্ৰহ্মহত্যার পাতক ঘাড়ে নেবে ? টাকা চাও, এই নাও ব্যাগ । সামান্য যা কিছু আছে, ব্যাগে আছে । মানুষ খুন করবে কেন ? পাপ কেন করবে ? হরিবোল বলো । হরিবোল বলো— আমি বল্লাম—আপনি যখন বলেছিলেন একথা, আপনার মনের ভাব কি রকম হচ্ছিল ? —মনে ভয়ও ছিল না ভরসাও ছিল না । অসাড় হয়ে গিয়েছিল মন । মরে যাই, যাবে। এই রকম মনের ভাব । কে যেন কি বলচে মনের মধ্যে বসে। কি আশ্চৰ্য্য ভাব—কে যেন বলচে—ওকে বলে, ওকে বলে । কি বলবো ? যা মুখ দিয়ে বেরুবে । আমি রুদ্ধ নিশ্বাসে বল্লাম—তারপর ? : —তারপর, যা আশা করি নি, তাই ঘটে গেল হঠাৎ । লোকটি লাঠি নামিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালে৷ ৷ বল্লে—আপনার নাম কি ? আমি নাম বল্লাম । সে আরও এগিয়ে বল্লে—দিন ব্যাগটা আমার হাতে। আমি ওর হাতে ব্যাগটা তুলে দিয়ে ভাবলাম টাকাগুলো নিয়ে লোকটা আমায় ছেড়ে দিলে বুঝি । কিন্তু তারপর দেখি লোকটা আমার পিছু পিছু আসচে। তিলজুড়ি গ্রামের কাছে এসে পৌঁছেচি, ঘরবাড়ী দেখা যাচ্চে, তখন সে বল্পে—ঠাকুর, আপনার ব্যাগটা ধরুন । কথার স্বরে মুর্শিদাবাদের টান। পেছনে চেয়ে দেখি বাকি তিনটি লোক নেই, কখন সরে পড়েচে লক্ষ্য করি নি। তারপর সে ট্যাক থেকে একটা টাকা বার করে নীচু হয়ে আমার পায়ের ওপর রেখে উপুড় হয়ে প্রণাম করলে। বলে, পরের খুলে নেবার যুগ্য নই, আমি জাতে বাঙ্গী। আমার বাড়ী ডহরাপাড়, কাটোয়। ইন্টিশান থেকে সাত ক্রোশ পশ্চিমে। আমার নাম সতীশ বাঙ্গী। আপনাকে একটা কৰা