পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 8३७ এমন সময়ে পথের ওপর আলো এসে পড়লো। কারা আসচে ওদিক থেকে । গলার স্বয় শোনা যাচ্চে । স্বধার গলা যেন ? পরক্ষণে বিনোদের মা ঝি লণ্ঠন নিয়ে পথের সামনে এসে পড়লো। পেছনে স্বধী ও তাঁর কোলে খোকা । লন্ঠনের আলোতে দেখা গেল স্পষ্ট। বিনোদের মা চেচিয়ে বলে উঠলো—ও মা, এ যে দাদাবাবু অন্ধকারে এখানে দাড়িয়ে! আমরা গিইলাম রায়-বাড়ী সত্যনারানের সিন্নির পেসাদ পেতে বাড়ী চাবি দিয়ে— আর কোন কথা ওর কানে গেল না । খোকা হঠাৎ অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে দেখছিল। পরক্ষণেই সে মার কোল থেকে নেমে দৌড়ে হাত বাড়িয়ে ওর দিকে ছুটে আসতে আসতে বল্লে—বাবা-ও বাবা-তুই কোথায় গেইলি ? আমার জন্তে মুকি এনেচ ?...ও বাবা— তারপরে ওর গলা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলে, সীতানাথ নীচু হয়ে ওকে কোলে তুলতে গেল। খোকা অাদরের স্বরে বল্লে—বালাই—মুকি এনেচ বাবাই ? হরিকাকা হরিকাকার আসল নাম ছিল হরিপ্রাণ মুখুজে । নামটা শুনতে ভক্তের মত হলেও হরিকাক আদৌ ভক্ত ছিলেন না। ছিলেন অত্যন্ত দুদে, মাতাল, প্রবল-প্রতাপাম্বিত, কাণ্ডজ্ঞান-শূন্ত, পরপীড়নদক্ষ, আরও কত কি। অল্প কিছু জমিদারী ছিল, তারই আয়ে দিন চলে যেত। স্বর্গে মর্ত্যে হরিকাকা কাউকে গ্রাহ করতেন না, অথচ তার দাপটে মেদিনী কাপতো । রাস্তা দিয়ে কেউ হয়তো টেরি কেটে গান গাইতে গাইতে চলেচে, হরিকাকা হুকুম দিতেন— ধরে নিয়ে এসে তো ব্যাটাকে । এই, কে যাচ্চ, শোনো ইদিকি । রায় জেলের ছেলে খামাচরণ। আজকালকার ছেলে বলে সে একটু শোঁখিন মেজাজের, একখানা রাঙা গামছা কাধে, পান চিবুতে চিবুতে সে যাচ্ছিল সৌরভী জেলেনীর বাড়ী আড্ডা দিতে । হরিকাকা বল্পেন—কে, শুামাচরণ ? টেরি কেটে রাগিণী ভেঁজে যাচ্চ কোথায় ? বীপের পয়সাডা কি আজকাল বেড়েচে ? শু্যামাচরণ নিরুত্তর । —বলি, কানে কথা গেল না ? ' উত্তর দাও । খামাচরণ অধোমুখে দণ্ডায়মান।