পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

षटैष खण २é করে গেল তার মেজ জামাই। তাও অন্নপ্রাশনের দিন সকালে । একটা কথাও তার আগে আমায় কেউ বললে না। সনাতনদী বললে—এর শোধ নিতে হবে ভায় । আমরা সবাই তোমার দলে। তুমি যদি বলে, এপাড়ার একটি প্রাণীও মুখুয্যে বাড়ী পাত পাড়বে না ! —আমি তা বলচি নে। সবাই খাবে মুখুয্যে-জ্যাঠার বাড়ী । সনাতনদী অবাক হয়ে বললে—এই অপমানের পরেও তুমি যাবে? না, না, তা আমরা হোতে দেবো না। আমার উপর ভার দ্যাও, দ্যাথো কোথাকার জল কোথায় মারি । কে নী জানে ওঁর বংশে গোয়ালা অপবাদ আছে ? ওঁর মেজ খুড়ী বিধবা হোয়ে ওই নিবারণ ঘোষের কাকা অধর ঘোষের সঙ্গে ধরা পড়েন নি ? —আঃ, কি বলচ সনাতন ওসব মুখে উচ্চারণ কোরো না। আর কেউ যদি না-ও যায়, আমি খেতে যাবে। —বেশ, তোমার ইচ্ছে । গায়ের লোক কিন্তু তোমার অপমানে ক্ষেপে উঠেছে। —তাদের অসীম ধন্যবাদ । বাড়ী গিয়ে ডাবের জল খেয়ে ঠাণ্ডা হোতে বলো । নিমন্ত্রণের আসরে ভিন্নগ্রামের বহুলোকের সমাগম । দু-তিনটি চাকর অভ্যাগতদের পদধৌত করবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে ছুটোছুটি করচে । মন্তবড় জোড়া শতরঞ্জি পড়েচে চণ্ডীমণ্ডপের দাওয়ায়। উঠোনজোড়া নীল শামিয়ান টাঙানো। একপাশে দুটি নতুন জলভরতি জালা, জালার মুখে পেতলের ঘটি, জালার পাশে একরাশ মাটির গেলাস । আমায় ঢুকতে দেখে মুখুয্যে জ্যাঠামশায় কেমন একটু অবাক হয়ে গেলেন। তখুনি সামলে নিয়ে আমার দিকে চেয়ে বললেন—অারে শশাঙ্ক যে ! এসে এসে। —একটু দেরি হয়ে গেল জ্যাঠাবাবু রুগীপত্তর দেখে আসতে— —ঠিক ঠিক, তোমার পশার আজকাল— —আচ্ছা, আমি একবার রান্নাবান্নার দিকে দেখে আসি কি রকম হোল । —যাও যাও, তোমাদেরই ত্বে কাজ বাৰ\\ সেই থেকে বিষম খাটুমি শুরু করলাম। মাছের টুকরে। কতবড় করে কাটা উচিত, চাটনিতে গুড় পড়বে—না চিনি, বাইরের অভ্যাগতদের নিজের হাতে জলযোগ করানো, খাওয়ার জায়গা করা, বালতি হাতে মাছের কালিয়া ও পায়েস পরিবেশন, আবার এরই মধ্যে ভোজসভায় এক গেয়ে ঝগড়া মেটানো ৷ পল্লীগ্রামের ব্রাহ্মণভোজন বড় সাবধানের ব্যাপার, পান থেকে চুন খসলে এখানে অঘটন ঘটে। একজন নিমন্ত্রিতের পাতে নাকি মাছ পড়ে নি— ছবার চেয়েচেন তিনি, তবুও কেমন ভুল হয়ে গিয়েচে । এত তাচ্ছিল্য সন্থ হয় ? সে নিমন্ত্রিত ব্যক্তি খাওয়া ফেলে উঠে দাড়ান আর কি ! শামিয়ানার তলায় যত ব্ৰাহ্মণ খেতে বসেছিল সবাই হাত গুটিয়ে বসলে, কেউ খাবে না। ব্রাহ্মণভোজন পও হবার উপক্রম হোল । ভোজ্যবঙ্কর বালতি হাতে পরিবেশকেরা আড়ষ্ট হয়ে দাড়িয়ে রয়েচে ।