পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী hed আমায় ও বল্পে—বাবু, আপনি কোথায় যাবেন ? —আমি একটু এগিয়ে ডান দিকের রাস্তায় নেমে যাবো । ওখানেই আমার গা । —গোপালনগর এখন কত দূর আছে ? —ত দেড় মাইল । —পথে কোনো ভয়-টয় নেই তো ? আমি জোরে ঘাড় নেড়ে বল্লাম—লা, ভয় কিসের? এ অঞ্চলে বাঘ-টাঘ নেই। বুনো শুয়োরও নেই। সে বল্লে—আমি বাঘের কথা বলিনি বাবু—বলি এই—সন্দেবেলা আবার নাম করতে নেই—সেই তাদের— —ও, ভূতপ্রেতের ? —ও নাম করবেন না সনোবেলা। রাম রাম রাম রাম ! ও নাম কি করতে আছে এ সময় ? রাম•রাম রাম রাম— আমি অতি কষ্টে হাসি চেপে বল্লাম—ও, বুঝেচি। তবে একটা কথা, যখন তুমি বিদেশী লোক, তখন তোমাকে সব খুলে বলাই ভালো । —কি বাৰু? —দাড়াও এখানে। আমি তো এখুনি নেমে যাবে, তুমি এক যাচ্চ এতটা পথ—অন্ধকারে —পথে জনপ্রাণী নেই– । আমার বর্ণনার বহর শুনে লোকটা আরও আমার দিকে ঘেষে দাড়ায়। আমার মুখের দিকে ই করে চেয়ে বল্লে—তারপর বাবু ? —তারপর আর কি, তোমাকে বলা আমার উচিত নয়, কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করলে তখন না বলাটাও তো ঠিক নয়। বিশেষ করে এক যখন যাচ্চ। সঙ্গে নেই লোক। ওই যে একটা সঁাকো আছে রাস্তার ওপর বনের পাশে, ওই সাকোটা বড় খারাপ জায়গা । —কেন বাৰু ? —ও জায়গাটাতে ভূত–মানে ওঁরা সব আছেন কিনা। পাশে যে বড় বাগান, ওটার নাম গলায়-দড়ের আমবাগান। বডড খারাপ জায়গা। অনেকদিন আগে তখন আমি ছেলেমানুষ, একবার একজন এই তোমার মতই বিদেশী লোক এক যাচ্ছিল গোপালনগরে, সন্দের পর । তার পরদিন সকালবেলা দেখা গেল কিসে তার ঘাড়টা ভেঙে মেরে ফেলে রেখেচে সাকোর তলায়। এ আমার নিজের চোখে দেখা। কথাটা তোমায় বলা উচিত নয়, তবে যখন জিগ্যেস করলে, তখন চেপে রাখাও তো উচিত নয়। একটা বিপদ হতে দেরি লাগে না, তখন তুমি বলতে পারো–বাৰু, আপনি জেনেশুনেও আমার বলেন নি কেন? সন্দের পর কেউ ও পথে যায় না । প্রাণ হাতে করে যেতে হয় । আজ বছর দুই আগে এক রাখাল ছোড়া দিনদুপুরে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল সাকোর তলায় । যাক সে, তুমি রাম রাম বলতে বলতে চলে যাও, কোনো ভয় নেই। - –বাৰু, আপনি কি নেমে যাবেন ? —দ্ব্য, আগে আমার গায়ে রাস্তা নেমে গেল। আমি এইবার চলে যাবো ।