পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 802 সাতকড়ি দামী শাল গায়ে দিয়ে, আট আঙুলে দশটা সোনার আংটি পরে, রুপোর গড়গড় টানতে টানতে তাদের সঙ্গে কলকাতার ব্যবসার গল্প করতে, তার মধ্যে লাখ ছলাখের নীচে কোনো টাকার অঙ্কই ছিল না। আমাদের পাড়ার রায় মহাশয়, বিশ্বাস মশায়, গাজুলী মশায়রা ই করে অবাক হয়ে শুনতেন, আর বোধ হয় ভাবতেঙ্গ—এত টাকাও জগতে আছে ? সাতকড়ি কৰ্ম্মকার এই ভাবে গল্প শুরু করতো । —আন্ধন গাঙ্গুলি দাদা, প্রাতঃপ্রণাম । বন্ধন । চা খাবেন ? —না ভায়া, এখনো আহ্নিক হয় নি, থাক । —তাহলে সন্দের সময় অবিপ্তি এসে চ খেয়ে যাবেন । ভালো চা ৷ আমার এক খন্ধের চা-বাগানের মালিক, রায় বাহাদুর বটকৃষ্ণ দত্ত, লেবুবাগান । তিনিই পাঠিয়ে দেন ফি বছর । বাজারে এ চা নেই, এর নাম অরেঞ্ছ পিকো—চ গাছের পাতার কুঁড়ি থেকে হয়— অনিল চক্রবর্তী বরেন—তারপর, নিবারণ, কেমন কাটলো এবার কলকাতায় ? নিবারণ গল ঝেড়ে নিয়ে গম্ভীর স্বরে বল্লে—কাটলো ভালোই। তবে খাটতে খাটতে জান বেরিয়ে গিয়েচে। এখানে এসে একটু জিরিয়ে নিয়ে বাঁচলাম । —কেন ? —দাদা, সে কথা আর বলবেন না। পঞ্চাশ হাজার টাকার লোহা কিনে ফেলে রেখে এসেছিলাম পাটনায় এক হিন্দুস্থানী লোহাওয়ালার দোকানে। তারপর সে লোহা আর আসে না । তিনবার সেজন্যে ছুটোছুটি করলাম সেখানে । আমাকে পাটনার সকলেই চেনে, সকলে খাতির করে । বাজারে বেরুলেই বলবে, আমুন বাৰু। বাৰু ছাড়া নাম ধরে কেউ ডাকবে না। তারা বল্পে—এমন জুয়াচোরের ফাদেও আপনি গিয়ে পড়েচেন । সে-লোহা বেশি দাম পেয়ে ও অন্ত জায়গায় বেচে দিয়েচে — —তারপর ? to —তারপর নালিশ মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে, উকিলের চিঠি দিয়ে অনেক কাও করে তবে সে লোহা উদ্ধার করলাম। অনেক টাকা খরচ হয়ে গেল তাতে— সাতকড়ি অমনি উচিয়ে বসে আছে। সে অমনি বলবে—টাকা খরচের কথা আর শুনে কি হবে ভায়া। আমাদের পড়তা পড়েচে খারাপ। শুধু বাজে টাকা-খরচ লেগেই আছে। পোস্তায় লঙ্কার মহাজন আছে এক মাদ্রাজী । তার হয়ে মাল গন্ত করতে গেলাম চাটগায়ে । জুড়ন বণিক আর হারাধন বণিক চাটগাতে বড় আড়ৎদার। দুজনের আড়ৎ থেকে সত্তর হাজার টাকার লঙ্কা খরিদ করলাম। হুক্তিতে টাকা দেবো। ছণ্ডি বন্ধ হয়ে গেল। এদিকে মাদ্রাজী টাকা পাঠায় না। আমি ঠায় চাটগায়ে বসে। টেলিগ্রাম করলাম, জবাব নেই । তখন নিজে কলকাতায় এসে মহাজনের সঙ্গে দেখা করে খুব বকাঝকা দিলাম। তা বলে, বাবু, কঙ্কর হয়েচে, ছেলের অস্ত্রখের খবর পেয়ে দেশে চলে গিয়েছিলাম, এই নিন টাকা।