পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কুশল পাহাড়ী 88& —এখানে আছ নাকি আজকাল ? —ত প্রায় আট-ন বছর বাড়ীতে আছি। বড় কষ্ট পাচ্চি ভাই। কঠিন হাপানি রোগ । সেই সঙ্গে লিভারের বেদনা। যখন ধরে তখন শেষ করে দেয় । ইদিকে এসেছিলাম গরুটা খুঁজতে। তা পেলাম না। যেও সন্দেবেলা ?. সতীশের খবর মাঝে মাঝে বিদেশে আমার কানে যে একেবারে পৌছোয় নি তা নয়। শুনেছিলাম ওদের ব্যবসা নেই, কলকাতার বাড়ী বিক্রি হয়ে গিয়েচে । পাওনাদারেবা সব বেচে-কিনে নিয়েচে । থিয়েটার করতে গিয়েই সব গেল । তবে সেই সতীশ যে একেবারে এমন অবস্থায় পৌঁছেচে তা বুঝিনি। রাসবিহারী মুখুজ্যের কাছে কথাটা বলতেই রাসবিহারী বলে—ও, কে, সতীশের কথা বলচে ? এখনো কিছু বোঝে নি বাপু সতীশের মা কি বোঁ তোমার কাছে যায় নি ? —কেন ? —ওই দ্যাথো, আবার বলে ‘কেন ? ভিক্ষে করতে । নইলে পেট চলবে কি করে ? —বলেন কি ? এতদূর হয়েচে, তা তো ভাবি নি । —এখনো খবর পায় নি তুমি বাড়ী এসেচ । কাল সকালেই যাবে। আমরা তো বাপু বিরক্ত হয়ে গেলাম। বলে, নিত্যি নেই স্থায় কে, আর নিত্য রোগী ছাথে কে ? ওর মা সৰ্ব্বদা যাবে, চাল দাও, পয়সা দাও, তেল দাও । —ওদের অবস্থা এমন হল কেন ? —আবার বলে, কেন । তা হবে না ? মদে বদখেয়ালে ইয়েতে বাপ-জ্যাঠার পয়সাগুলো ঘোচালে। থিয়েটার করতে গিয়ে বাড়ীখানা গেল কলকাতার ৷ পাওনাদারেরা ডিক্রি করে যথাসৰ্ব্বস্ব নিয়েচে, এখানকার জমি-জমাও ক্রোক দিয়ে নিয়েচে । ক’বিঘে ধানের জমি বুঝি আছে, তাও সারা বছরের ভাত হয় না তাতে । এখন ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো সেই গায়ের ভিটে। আর যাবে কোথায় ? তা ছাড়া, ও বাঁচবে না। কঠিন রোগ, পথ্য নেই, চিকিচ্ছে নেই । 鱷 সতীশের বাড়ী সন্দেবেলা গিয়ে বসতাম। প্রায়ই যেতাম । ছেড়া মাছুরে বসে ইপিাতো । এই সময় নাকি হাপানির টান বাড়ে। আজ দশ বছর হল সতীশ গ্রামে বাস করতে, হিসেব করে দেখলাম। এই দশ বছরে দারিত্র্যে অনাহারে আর রোগে ওকে এই অবস্থায় নিয়ে এসে ফেলেচে । পুরনো দিনের কথা আমি কিছু কিছু তুলতাম । একদিন বল্লাম—তোমার বিয়েতে এ গায়েতে ইংরিজি বাজনা এসেছিল, আর গ্যাসের আলো জলেছিল, মনে পড়ে ? সতীশ স্থাপতে হাপাতে বলতে, আর ভাই! বাদ স্থাও ওসব কথা । এখন গেলেই বাচি । আর সন্থ হয় না কষ্ট । সে সব মনে নেই ভাই। —মনে নেই ?