পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88ఆ বিভূতি-রচনাবলী —আর মনে থাকে! কোথা থেকে মনে থাকবে ? রোজ একটা করে টাকা না হোলে সংসার চলে না। তাও মুন ভাত খেয়ে । কোথা থেকে মনে থাকবে ? বলো কি ! —তা তো বটেই। সকালে একদিন বাড়ী বসে আছি, সতীশের মা এসে বল্পেন—বাবা একটা কথা বলবো । আমার চার আনা পয়সা দিতে পারো ? আফিং চাই রোজ চার আনার। কাল যোগাড় করতে পারিনি। খোকা পেট ফুলে দম আটকে যায় আর কি। মা হয়ে দেখতে পারিনে— তাই তোমার কাছে এলুম বাবা । আবার একদিন ওর বোঁ । আর একদিন ওর মা । শুধু খোকার আফিঙের পয়সা চার আনা । বাড়ীতে স্ত্রীকে বলে দিলাম, এরা এলে যেন ফিরিও না, চার আনাই দিও। স্ত্রী বল্লে—তুমি শুধু দ্যাথো চার আনা । ভেতরের খবর তো জানো না! কামার বেী এসে চায়ের দুধ নিয়ে যায়, চাল নিয়ে যায়। একখানা পুরনো শাড়ী দিলাম। বল্লে— পরবার কাপড় নেই, দিন, না হোলে মান যাবে। কি করি—দিলাম। ওরা নাকি খুব বড় লোক ছিল ? গৃহিণীকে বল্লাম পুরোনো দিনের কথা । আমি তখন বালক । সাতকড়ি ও নিবারণ কৰ্ম্মকারের শালের জোড়া ও দাসদাসীর বাহার । দশ-বিশ হাজারে মরতো না নিবারণ কৰ্ম্মকার । একদিন ওকে দেখতে গেলাম । তখন আমি বছর খানেক হল দেশে এসেছি। সতীশ বল্পে—আর বঁাচবো না । একটা জিনিস খেতে বডড ইচ্ছে, খাওয়াবে ? —কি ? —বড় ভালবাসতুম মাংসের কাটলেট। কতকাল খাইনি ! —খাওয়াবো । তবে তোমার কিছু খারাপ হবে, না তো ? ও হেসে বল্লে—আর আমার খারাপ আর ভালো ! শোন, বোঁটাকে একটু দেখো বুঝলে ? ভালো মানুষের মেয়ে। বড় খোয়ার করলাম। কষ্ট হয়। তুমি বরং— ইাপের টানে ও আর বেশী কিছু বলতে পারলে না। আমি বাধা দিয়ে বল্লাম—ও সব কি কথা ! কিছু ভয় নেই তোমার। কাটলেট খেয়ে খুব খুশি । বেশি খেতে পারলে না। দু-একখানা খেয়ে ওর স্ত্রীকে দিয়ে দিলে । বল্পে, আঃ, কতকাল খাইনি ! আগে আগে— একটু স্নান হাসি হেসে চুপ করলে । সতীশ আরো এক বছর ধুকতে ধুকতে টিকে গেল। হাপানিতে কষ্ট পায়, সহজে মরে না। ওর স্ত্রীও সেই বছরের মধ্যেই মারা গেল । গ্রামের লোক চাদা করে গঙ্গায় দিয়েছিল দু'জনকেই।