পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$o e বিভূতি-রচনাবলী ঘুর্মুলাম না, ঘুম আমার হলও না—শুয়ে আড়-চোখে বুড়োর দিকে চেয়ে রইলাম । বুড়ো কি যে করছে, অনেকক্ষণ অবধি আমি ঠাওর করতেই পারলাম না। অবশেষে মনে হল, বুড়ো ছবি অঁাকছে ! খুব মন দিয়ে ঝুকে পড়ে ছবি আঁকছে। ভালো করে দেখবার সাহস আমার হয় নি। ছবি অঁাকছে নিশ্চয়ই। সেটা বুঝতে পারলাম । আমারও ঘুম হল না । বুড়ো প্রায় রাত তিনটে পৰ্য্যন্ত ছবি আঁকলে, ভোরের কিছু আগে ঘুমিয়ে পড়লো। আমিও ঘুমিয়ে পড়লুম। জেগে উঠে দেখি রোদ উঠেচে । বুড়ে তখনো ওঠে নি। আস্তে আস্তে উঠে বুড়োর মাছরের কাছে এসে দেখি মাদুরের ওপর মাটির খুরি অনেকগুলো সারি সারি সাজানো, তাতে নানা রং। সরু মোট কতকগুলো তুলি একটা পিড়িতে কাতভাবে সাজানে, কতকগুলো তুলি মাছুরের ওপর ছড়িয়ে পড়ে আছে—আর সামনে একখানা তক্তার ওপর পেরেক দিয়ে অঁাটা কাগজ কিংবা চটের ওপর একখানা যা ছবি ! ছবিখানা কোন একটি মেয়েছেলের । কার এমন সুন্দর মুখ, এমন বড় বড় টানা চোখ—কি জানি ? আধখানা মাত্র আঁকা হয়েছে—তাও সব যেন হয় নি, কিছু কিছু বাকি আছে। কিন্তু এমন স্বন্দর ছবি আঁকতে পারে এ বুড়ো ? এমন ছবি যে মানুষে আঁকতে পারে সে বিশ্বাস আমার ছিল না। ক্লাসে ইন্দু মাস্টারের দেওয়া আতা পাখী চেয়ারের ড্রইং আঁকি, তাও মনের মত হয় ন৷ আমার নিজেরই । ভাবি আত অঁাকবে, হয়ে যায় যে জিনিস, তাকে বেলও বলা চলে, আমও বলা চলে, হয়তো কুমড়ো বলাও যেতে পারে। স্বতরাং তলায় 'আতা' বলে লিখে দিতে হয় । কিন্তু এই খিটখিটে মেজাজের বুড়ো, এ এমন ছবি অঁাকতে পারে । অবাক হয়ে গেলাম। বুড়োকে ডেকে বলবো সে কথা ? দরকার নেই, ঘুমুক্ষে ঘুমুক । আমার বিদায় নেবার সময় হয়েচে । কিন্তু ঘুমন্ত বুড়োকে জাগাতেও সাহস হল না। না জানিয়েই বা যাই কি করে ? আবার ভয় হল, বুড়োর ছবি দেখে ফেলেছি, একথা ও না জানে। যে বদরাগী আর খিটখিটে, কি জানি হয়তো মেরেই বসবে। - বাইরে আমগাছটার তলায় গিয়ে বসলুম। আধঘণ্টা পয়ে ঘরের মধ্যে শব্দ পেয়ে বুঝলাম বুড়ে উঠেছে। তখন আমি আস্তে আস্তে পা টিপে ঘরের মধ্যে ঢুকলাম । বুড়ো মাছুরের ওপর বসে ছবিখানা দেখছিল, চমকে উঠে পেছনে চেয়ে বলে—কে ? —আজ্ঞে আমি । —ও, তুমি এখনো যাও নি ? --আপনি যুমুচ্ছিলেন, না দেখা করে— —ঠক ঠিক । তুমি বেশ ছেলে । ভাল ছেলে । —তা হোলে আমি যাই এখন ?