পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e& বিভূতি-রচনাবলী রামহরি বললে—রণধলে কে ? —ওই দোবেজি বলে এক কনেস্টবল আছে না ? সে-ই রাধলে । —মাংস রাঁধলে দোবেজি ? —ন, মাংস রাধলে বড়বাবু নিজে । ভাল রন্ধই করেন। গোবিন্দ র্দীর ভাল লাগছিল না এ সব কথা, সে যে বড় তা দেখানোর ফুরক্ষত সে পাচ্চে না। এর তো সব পাড়াগায়ে প্রেসিডেণ্ট । এরা পুলিশকে খাতির করলেও সে থোড়াই কেয়ার করে। থাস কলকাতা শহরে ব্যবসা তার, সেখানে শুধু ওরা জানে লাট সায়েবকে আর পুলিশ কমিশনারকে। গোবিন্দ বললে—পুলিশের হ্যাপা আমাদেরও পোয়াতে হয়। সেবার হলো কি, আমরা ত্যাবাক জিংকের পিপে কতগুলো রেখেচি দালানে, তাই সার্চ করতে পুলিশ এল। আমি বললাম–কিসের পিপে ? —হ্যাবাক জিংকের পিপে। ব্যাপারটা কি জানেন, বিলিতি হ্যাবাক জিংকের হন্দর সাড়ে উনিশ টাকা, আর সেই জায়গায় জাপানী জিংকের হনার সাড়ে সাত টাকা । আমরা করি কি, আপনার কাছে বলতে দোষ কি—বিলিতি হ্যাবাক জিংকের খালি পিপে কিনে তাতে জাপানী মাল ভরতি করি । —কেউ ধরতে পারে না ? —জিনিস চেন সোজা কথা না। ও ব্যবসার মধ্যে যারা আছে, তারা ছাড়া বাইরের লোকে কি চিনবে ? চেনে মিস্ত্রিরা, তাদের সঙ্গে— গোবিন্দ দুই আঙ্গুলে টাকা বাজাবার মূত্রা করলে। প্রলোদ সাধুর্থ কথাটা মন দিয়ে শুনছিল, লাভের গন্ধ যেখানে, সেখানে তার কার্ন খাড় হয়ে উঠবেই, কারণ সে তিন-তিন পুরুষ ব্যবসাদার । সে বললে—বলেন কি দা মশায়, এত লাভ ? গোবিন্দু ধূৰ্ত্ত হাসির আভাস মাত্র মুখে এনে গলার স্বরকে ঘোরালো রহস্যময় করে বললে—ত। নইলে কি আজ কলকাতা শহরে টিকতে পারতাম সাধুখা মশাই ? আমার দোকানের পাশে ডি, পাল এ্যাও সন্‌—লক্ষপতি ধনী, টালা থেকে টালিগঞ্জ এস্তোক আঠারোখান বাড়ী ভাড়া খাটচে, বড়বাবু মেজবাবু নিজের নিজের মোটরে দোকানে আসেন, সে মোটর কি সাধারণ মোটর ? দেখবার জিনিস। তাদের বলা যায় আসল বড়বাবু মেজবাৰু। মেয়ের বিয়েতে সতেরো হাজার টাকা খরচ করলে ৷ মোটর গাড়ী থেকে নেমে আমার দোকানে এসে হাতজোড় করে নেমস্তন্ন করে গেলেন। আসল বড়বাৰু মেজবাবু তাদের বলা যেতে পারে। নইলে আর সব—স্থ – আবদুল হামিদ চৌধুরী পুলিশের দারোগাদের বড়বাৰু ছোটবাবু বলেছিল একটু আগে। সে এ বক্রোক্তি হজম করবার পাত্র নয়। বললে—তা আমরা পাড়াগায়ে মাছুষ, আমাদের কাছে ওঁরাই আসল বড়বাবু, মেজবাৰু? এখানে তে আপনার কলকাতার বাবুর আসবেন না মুশকিলের আদান করতে ? এখানে মুশকিলের আসান করবে পুলিশই।