পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ه/ع অবখ্য এই ছুইটি উপন্যাসকে বিভূতিভূষণের ব্যতিক্রম বললে ভুল হবে। কারণ একেবারে শুরুতে গোড়ার উপন্যাস পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও দৃষ্টিপ্রদীপে এই পরস্ত্রীর প্রতি মোহ ও আসক্তির ইঙ্গিত বর্তমান। ডঃ স্বকুমার সেন বলেছেন : “লীলাকে পরিপূর্ণ ভাবে ভালোবেসেও অপুর হঠাৎ-পাওয়া কিশোরী বধূ অপর্ণাকে ভালোবেসে তাঁকে নিয়ে ঘর করতে কিছু বাধে নি। দৃষ্টিপ্রদীপের জিতু মালতীকে ছেড়ে এসেছিল কিন্তু উাকে মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারে নি। অথচ হিরন্ময়ীকে বিয়ে করতে খুব ইতস্তত করে নি। আসল কথা অপু-জিতুর মনে প্রবল টান ছিল তেরো-চোদ্ধ বছরের কিশোরী মেয়ের দিকে। পূর্ণযৌবনা তরুণীদের সে অবশুই ভালোবাসত, তবে সে ভালোবাসা সৌন্দর্ষের আসক্তি, যেন ভক্তের আরতি ও প্রদক্ষিণ । বেদীর দিকে হাত বাড়াবার মতো ভরসা হ’ত না।” ॥ २ } সেই প্রথম দিকের উপন্যাসের নায়কদের পরস্ত্রীর প্রতি যে মোহ ও কামনাবাসনা মনের গোপনে প্রচ্ছন্ন ছিল, এখানে দেখি তারই নিরাবরণ প্রকাশ। যে আসক্তি এতদিন সংযম, আদর্শ ও সততার স্বধৃঢ় বাধে অবরুদ্ধ ছিল, হঠাৎ সেই অবরোধের বাধ যেন ভেঙে গেল, বেনে জল ঢুকে ঘোরো জলকে বার করে নিয়ে গেল। সে যেন ইচ্ছাকৃত—স্বেচ্ছায় আগুনে বীপ দেওয়ার মত । আসক্তির কাছে এইভাবে আত্মসমর্পণ, এর স্বপক্ষে প্রৌঢ় নায়কদের যে যুক্তি তাকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বয়সটাই মুখ্য কারণ চল্লিশ বছরের প্রৌঢ়ের তরুণীর প্রডি আসক্তি। অল্পবয়সী তরুণীর ভাবভঙ্গী হাসি-রসিকতা নৃত্যগীত ইতিপূর্বে যা তারা পায় নি তাকে পেতে চাওয়া। মনের একটা ক্ষুধা মিটে গেছে—আর একটার জন্যে ঘৃণা-লঙ্গা-ভয় ংসার স্ত্রীপুত্র সব কিছু ত্যাগ করে সেই না-পাওয়া ক্ষুধাকে তৃপ্ত করার জন্যে ছুটে যাওয়া। এখানে সেই একই জীবনদর্শন—রবীন্দ্রনাথের ভাষায় নারীর দুই রূপ, বর্ষ ও বসন্তু— একটিকে পেয়ে যখন মানুষ তৃপ্ত তখন আর একটিকে পাবার জন্যে ক্ষুধিত হয়ে ওঠে তার মন। ঘরের স্ত্রীর কাছে সেবাযত্ন আদর সব কিছু পেয়েও এই বাইরের নারী, যারা শুধু রূপের কা পাতে, নৃত্যগীতে মোহ স্বষ্টি করে, তাদের ফঁাদে পতঙ্গের মত ঝাপিয়ে পড়ে। যেহেতু জিতু-অপুর মত নায়কর ছিল তরুণ—বিবাহের মধ্যে দিয়ে কিশোরী নারীকেই আস্বাদ করেছে তাই দেহকে বাদ দিয়ে শুধু কল্পনাতেই সেই পরস্ত্রীর সঙ্গমুখ লাভ করে তৃপ্ত থাকত। যৌবনের উন্মত্ত কামনার তৃপ্তি তারা বিবাহিত পত্নীর মধ্যে খুঁজেছিল তাই মনট দিয়েছিল শুধু পরস্ত্রীকে। এক্ষেত্রে ঠিক তার বিপরীত। গদাধর ও শশাঙ্ক দুজনেই প্রৌঢ় নায়ক, বয়েস চল্লিশ, দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীর সাহচর্যে নারীসম্ভোগে তৃপ্ত, মিটে গেছে তাদের সব দৈহিক ক্ষুধা। ঘরে সাতাশ বছর বয়সের স্ত্রী, পুত্রকন্যা। কাজেই বিবাহের যে অনিবার্ষ প্রয়োজন সেটা তাদের মধ্যে নির্বাপিত। এমন কি পুত্রকন্যা ও স্ত্রীকে জড়িয়ে সংসারের