পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

है५ জল 4 ή আনন্দ, কিসের আনন্দ সে সব আমি ভেবে দেখিনি, ভেবে দেখবার প্রবৃত্তি তখন আমার নেইও। অত্যন্ত আনন্দে গা-হাত-পা যেন বেলুনের মত হালকা হয়ে গেল। আমি যেন এখনি আকাশে উড়ে যেতে পারি। পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মাহুষ এই মুহূর্তে যদি কেউ থাকে তবে সে আমি । কারণ পান্নার ভালবাসা আমি লাভ করেছি। ওই চাউনি আমায় বুঝিয়ে দিয়েচে সে কথা। . সঙ্গে সঙ্গে আমাকে পাগল করেচে ওই চিন্তা ! আমার মনের মধ্যে আর একটা বুভুকু মন ছিল, তার এতদিন সন্ধান পাইনি, আজ সে মন জেগে উঠেচে পান্নার মত রূপসী কিশোরীর স্পশে । আমার মত মধ্যবয়সী লোককে সতেরো-আঠারো পছরের একটি মুন্দরী কিশোরী ভালোবেসে ফেলেচে—এ চিন্তা এক বোতল উগ্র স্বরার চেয়েও মাদকতা আনে। যার ঠিক ওই বয়সে ওই অভিজ্ঞতা হয় নি, সে আমার কথা কিছুই বুঝতে পারবে না। জীবনের সব কিছু অভিজ্ঞতা-সাপেক্ষ। সে রস যে পায় নি, হাজার বর্ণনা দিলেও সে বুঝতে পারবে না সে রসের ব্যাপার। এই জন্যেই বলেচে, অনধিকারীর সঙ্গে কোন কথা বলতে নেই। এমন একটি অনধিকারী এই গোবিন্দ দা ! আবদুল হামিদটাও তাই । স্কুল মনে ওদের অন্য কোন রসের স্পর্শ লাগে না, স্কুল রস ছাড়া । আবদুল হামিদ দাত বের করে বললে —আপনি বড় বেরণিক ডাক্তারবাবু।– আমি বললাম—কেন ? —অমন মাল নিয়ে গেলাম আপনার ডাক্তারখানায়—আর আপনি— —ওসব কথা এখানে কেন । —তাই বলচি । গোবিন্দ দা বললে—ছুড়িটা কিন্তু চমৎকার দেখতে, যাই বলুন ডাক্তারবাৰু। আর কি টং, কি হাসি মুখের, দেখুন না চেয়ে ! Jo আবদুল হামিদ বললে—ডাক্তারবাবু ওর ওপর কেমন চট। কই, আপনি তে ওর দিকে ফিরেও চাইচেন না ? অথচ দেখুন, আসর স্বদ্ধ লোক ওর মুখের দিকে চেয়ে আছে— আমি যে কেন ওর দিকে চাইচি না, কি করে বুঝবে এই সব স্থূলবুদ্ধি লোক। আমি সব দিকে চাইতে পারি, শুধু চাইতে পারি না পান্নার মুখে। পান্নাও পারে না আমার দিকে চাইতে। এ তত্ব বোঝা এদের পক্ষে বড়ই কঠিন । আবদুল হামিদকে বললাম—বকৃ বকু না করে চুপ করে থাকতে পারো না ? গোবিন্দ দা বললে—ডাক্তারবাৰু আমাদের সাধুপুরুষ কিন, ওসব ভাল লাগে না ওঁর। ও রসে বঞ্চিত । আমি উঠেই চলে যেতাম আসর থেকে, শুধু পান্নার চোখের মিনতি আমাকে আটকে রেখেচে ওখানে। ওদের কথাবার্তা আমার ভালো লাগছিল না মোটে। আবদুল হামিদ আমার সামনে রুমালে বেঁধে দুটাকা প্যালাদিলে—আমাকে দেখিয়ে দিলে। আমি পারলাম না প্যাল দিতে। পান্নার সঙ্গে সেরকম ব্যবসাদারি করতে আমার বাধে।