পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রীপ సిక অভিজ্ঞতা। মুখে সে কথা বলা যায় না, বোঝানো যায় না, শুধু সে-ই বোঝে ধার এ রকম হয়েছে । সকালে বামুনহাটি বলে একটা গ্রামে এক গ্রাম্য হাতুড়ে কবিরাজের অতিথি হয়েছিলুম সেদিন ; তার স্ত্রী একটি রণচণ্ডী—যতক্ষণ সেখানে ছিলাম, তার গালবাছের বিরাম ছিল না । আমি গিয়ে সবে বসেছি, তিনি দোরের আড়াল থেকে স্বামীর উদ্দেশ্বে আরম্ভ করলেন—s অলপ্লেয়ে মিন্‌সে, আমার সঙ্গে তোমার এত শক্ত রত কিসের বল দিকি ? রান্নাঘরের রোরাকে চালা তুলতে তোমায় বলেছে কে ? গরমে একে ঘরের মধ্যে টেক যায় না উকুন জললে, যাও বা একটু হাওয়া আসতো, চালা তুললে হাওয়া আসবে তো, ও ড্যাক্রা ? ওই অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে তোমার পিণ্ডি রাধবো খেও । স্ত্রী চলে গেলে কবিরাজ-মশায় বললেন—আর বলেন কেন মশাই, হাড় ভাজা-ভজা হয়ে গেল। শুনলেন তো দাতের বাছি—ওই রকম সদাসৰ্ব্বদা চলছে। আর ঘোর শুচিবাই, দুনিয়ার সব জিনিস সব অশুদ্ধ। দিনের মধ্যে সাতবার নাইছে, নিমুনিয়া হয়ে যদি না মরে তবে কি বলেছি। আজ এক বছর ধরে ওই গোয়ালের একপাশে তক্তপোশ পেতে শোয় আলাদা— ঘরের জিনিস সব অশুদ্ধ যে, সেখানে কি শোয়া যায় ? ওরকম ছিল না মশায়, ছেলেটা মরে গিয়ে অবদি ওই রকম— তারপর যে কথা বলছিলাম ! বামুনহাটি থেকে বিকেলে বার হয়ে ক্রোশতিনেক যেতেনীযেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। মাঠের মধ্যে একটা ছোট নদী, রাস্তা থেকে একটু দূরে। নদী এত ছোট যে তাকে আমাদের দেশ হ'লে বলতে খাল। দু-পাড়ে রাঙা কাকর বিছানে, ধারে ধারে র্কাটাঝোপ আর তালগাছ। সেখানে রাত্রিযাপন করবো বলে মাটির ওপর ছোট শতরঞ্চিখানা পেতে তার ওপরে বসলাম। কোনদিকে জনপ্রাণী নেই। খালের ওপারে একটা তালগাছের মাথায় শুক্নো পাতা হাওয়ার খড় খড় শব্দ করছে—এই অন্ধকার প্রদোষে তালগাছের মাথার ওপরকার আকাশে নিঃসঙ্গ একটি তারা—আমি একবার তারাটির দিকে চাইছি, একবার চারদিকের নিস্তব্ধ, পাতলা অন্ধকারের দিকে চাইছি । হঠাৎ আমার মনে কেমন একটা আনন্দ হ'ল। সে আনন্দ এত অদ্ভুত যে বেদন থেকে তা বেশী পৃথক নয়, সে পুলক চোখে জল এনে দিল, মনে কেমন একটা অনির্দেশু অভাবের অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে যেন। কিছুক্ষণ আগেও যে জগতে ছিলাম, এ যেন সে-জগৎ নয় । এ জগৎ যুগযুগের তুচ্ছ জনকোলাহল কত গভীর মাটির স্তরের নীচে চাপা পড়ে যাওয়ার জগৎ । ফুল ফুটে নির্জনে ঝড়ে-পড়ার জগৎ“অজানা কত বনপ্রাস্তের কত অশ্রুভরা আনন্দতীর্থের জগৎ ••কত স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া--"কত আশার হাসি মিলিয়ে যাওয়া--- শুধু নির্জনে চুতবীথির তালীবনরেখার মাথার ওপর খামলতার পাড়টান সীমাহীন নীল শূন্তে বহুদূরের কোন ক্ষীণরশ্মি নক্ষত্রের সঙ্গে এ জগৎ এক-শতাব্দীতে শতাব্দীতে কত লক্ষ মনের আনন্দ, আশা, গৰ্ব্ব, হাসি, দৃষ্টি-ক্ষমতার বাহাদুরি কোথায় মুছিয়ে নিয়ে ফেলে দেয়, ক্ষীণ দুৰ্ব্বল হাত প্রিয়কে নিৰ্ম্মম জীবনের গ্রাস থেকে বাচাবার চেষ্টা করে, না বুঝে হাসে, খুশী হয়, আশার স্বপুজাল বোনে••• অন্ধকারে কোন খনিগর্ভে চুনাপাথর হয়ে যায় তাদের হাড়. আবার নবীন বুকে নবীন আনন্দ জেগে ওঠে। আবার হাসি, আবার খুশী হওয়া, আবার আশার স্বপ্ন-জাল বোনা...অথচ সব সময় তাদের মাথার ওপর দিয়ে অনন্ত কালের প্রবাহ इै বি. র. ৪—৭ o