পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী اه و لا যায়। তৃতীয় দিন বিকেলে এসে বললে—পুকুরপাড়ের বাগান দেখেছেন ? অামুন দেখিয়ে নিয়ে আসি । এই কথাটা আমার বড় ভাল লাগল—এ পর্য্যস্ত আমি কোন মেয়ে দেখি নি যে বাগান ভালবাসে, দেখবার জিনিস বলে মনে করে । ওর সঙ্গে গেলাম। অনেক গাছ আমাকে সে চিনিয়ে দিলে । কাঞ্চন ফুলের গাছ এই প্রথম চিনলাম। এক কোণে একটা বড় তমাল গাছের তলায় ইটের তুলসীমঞ্চ ও বেদী দেখিয়ে বললে—বাবা এখানে বসে জপ করতেন । - জিজ্ঞেস করলাম—আপনার বাবা এখন কোথায় ? মেয়েটি কেমন যেন একটা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বললে—বাবা তো নেই, এই চার বছর হ’ল মারা গিয়েছেন। এই যে পুকুরট, বাবা কাটিয়েছিলেন, আর এই বকুলগাছের ওপাশে বিষ্ণুমন্দির তুলছিলেন, শেষ করে যেতে পারেন নি। এই কথায় স্বত্র খুঁজে পেলাম ওর সম্পূর্ণ পরিচয় জিজ্ঞেস করবার। এ দু-দিন কাউকে ওর সম্বন্ধে কোন কথা বলি নি, পাছে কেউ কিছু মনে করে। কৌতুহলের সঙ্গে বললাম—আপনার বাবার নামেই বুঝি এই আখড়া ? –কি, লোচনদাসের আখড়া ? তা নয়, আমরা ব্রাহ্মণ, আমার বাবার নাম ছিল কাশীশ্বর মুখুয্যে। লোচনদাস এই আখড় বসান, কিন্তু মরবার সময়ে বাবার হাতে এর ভার দিয়ে যান। তারপর বাবা আট-ন বছর আখড়া চালান। আখড়ার নামে যত ধানের জমি, সব বাবার। আমুন, বিষ্ণুমন্দির দেখবেন না ? মনে ভাবি বিষ্ণুমন্দির তুচ্ছ, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত আমি সঙ্গে যেতে রাজী আছি। পুকুরপাড়ের একটা বকুলগাছের পাশে একটা আধ-তৈরি ইটের ঘর। মেয়েটি বললে–গাথা শেষ হয় নি তো, হঠাৎ বাবা—তাইতে আদেক হয়ে আছে। কাচা গাখুনি, আর-বছরের বর্ষায় ওদিকের দেওয়ালের খানিকট আবার ভেঙে পড়ে গিয়েছে । বকুলগাছে কি লতা উঠেচে, দেখিয়ে বললাম—বেশ ফুল ফুটেছে তো, কি লতা এটা ? ও বললে—মালতী লতা। একটু চুপ করে থেকে হেসে বললে—জানেন? আমার নাম— ওর কথার ভঙ্গিতে মনে হ’ল এ এখনও ছেলেমানুষ । বললাম—আপনার নাম মালতীলতা ? ও ! কাল উদ্ধবদাস বাবাজী রুনি বলে ডাকছিলেন আপনাকে, তাই ভাবলাম বোধ झग्न ও সলজ্জ মুখে বললে—লতা নয়, মালা। দু’জনেই আখড়াবাড়ির নাটমন্দিরে ফিরে এলাম। তার পর মালতীকে আর দেখতে পেলাম ন, সেই যে সে রান্নাঘরে কি কাজ নিয়ে ঢুকল রাত দশটা পৰ্য্যস্ত আর সেখান থেকে বেরুল না। সকালে ঘুম ভেঙে উঠে মনে কেমন এক ধরনের মধুর অনুভূতি। মালতীকে যেন স্বপ্নে দেখেছি—ওর প্রকৃতপক্ষে কোন পার্থিব অস্তিত্ব যেন নেই। স্বপ্ন ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে তার কথা মনে পড়ল, বকুলতলায় তার সঙ্গে দাড়িয়েছি, সে হাসিমুখে নিজের নাম বলেছে, তার চোখমুখের সেই সচেতন নারীত্বের সলজ্জত অথচ বালিকার প্রগলভ কৌতুক-প্রিয়তা–তাঁর সার দেহের মুঠাম লাবণ্য, এসব যেন অবাস্তব স্বল্পজগৎ থেকে সংগ্রহ করা স্থতি। কিন্তু মনে সে বেদনা অস্তুভব করলাম না, যা আসে এই কথা ভেবে যে স্বপ্নে যা দেখেচি ও সব মিথ্যে, মায়া, মায়া—ওঁ আর পাব না, ও ছায়ালোকের রচা স্বৰ্গ, ওর চন্দ্রালোকিত নির্জন পৰ্ব্বতশিখরও