পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ های ه لا বুঝিয়ে বলি, টাকা না দিতে দিলে আমার এখানে থাকা হবে না। চলে যেতে হবে। সেদিন থেকে মালতী এ নিয়ে আর কিছু বলে নি । পাড়াগায়ের দিনগুলো অদ্ভূত কাটে —দীঘির পাড়ে রাঙামাটির উচু বাধে এসময়ে একরকম ফুল ফোটে, ছায়া পড়ে এলে মাঝে মাঝে এক গিয়ে বসি । বাগদীদের মেয়ের হাটু পৰ্য্যস্ত কাপড় তুলে মাছ ধরে, আখড়ার গোয়াল থেকে সাজালের ধোয়া ঘুরে ঘুরে ওঠে— তালের দীর্ঘসারির ফাক দিয়ে এই সন্ধ্যায় কতদূর দেখতে পাই—দাদার দোকান, দাদার বাতাসার কারখানা, সীতার শ্বশুরবাড়ি, তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা, নিমৰ্চাদের বেী, শৈলদি ।. মালতীর স্বভাব কি মধুর। কি খাটুনিটা খাটে আখড়ায়—এক দিন উচু কথা শুনি নি ওর মুথে—কারও ওপর রাগ দেখি নি—বাপের মেয়ে বটে ! আখড়ায় ছোট একটা অশ্বখ-চারা আছে, উদ্ধব দাস রোজ স্নান ক’রে এসে গাছটা প্রদক্ষিণ করে, গাছটাকে জল দেয় । এ তার রোজ করাই চাই । একদিন মালতীকে ডেকে বলি— তোমার উদ্ধব-জ্যাঠা পাগল নাকি ? ও-গাছটার চারিপাশে ঘোরার মানে কি ? মালতী বললে —কেন ঘুরবে না ; সবাই তো আর আপনার মত নাস্তিক না। অশ্বখগাছ নারায়ণ–ওর সেবা করলে নারায়ণের সেবা করা হয়—জানেন কিছু ? আমি বললুম—তাহলে তুমিও সেবাটা শুরু ক’রে পুণ্য কিছু ক'রে নাও না সময় থাকতে ? মালতী শাসনের সুরে বললে—আচ্ছা আচ্ছ, থাকৃ। আপনি ও-রকম পরের জিনিস নিয়ে টিটকিরি দেন কেন ? ওদের ওই ভাল লাগে, করে। আপনার ভাল লাগে না, করবেন না। তা নয়, সারাদিন কেবল এর খুত ওর খুত—ছি, আপনার এ স্বভাব সারবে কবে ? বললাম—তোমার মত উপদেশ দেওয়ার মানুষের দেখা পেতাম যদি তাহলে এত দিন কি আর স্বভাব সারে না ? তা সবই অদৃষ্ট ! কথা শেষ ক'রে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলতেই মালতী রাগ করে আমার সামনে থেকে উঠে গেল। বিকেলে কিন্তু ওকে আমার কাছেই আসতে হ’ল আবার । নিকটে নকশিপাড়া গায়ে একটা যাত্রার দল ছিল, তাদের অধিকারী এসে উদ্ধব দাসকে বলে—বাবাজী, তিন মাস বসে আছি বায়নপত্তর একদম বন্ধ। দল তো আর চলে না। কালনা থেকে ভাল বাজিয়ে এনেছিলাম- ঢোলকে যখন হাত দেবে, আঃ, যেন মেঘ ডাকচে, বাবাজী ! তা আপনাদের আখড়ায় এক দিন শু্যামমুন্দরজীউকে শুনিয়ে দিই। কিছু খরচ দিতে হবে না, তেল তামাক আর কিছু জলখাবার— —জলখাবার-টাবার হবে না পাল-মশায় । তা ছাড়া আসর-খাটানো ওসব কে করে ? এখন থাক । মালতী আমায় এসে বললে—উদ্ধব-জ্যাঠাকে বলুন, যাতে যাত্রাট হয়। আমি জলখাবার দেব, জ্যাঠাকে সেজন্তে ভাবতে হবে না। আপনাকে কিন্তু আসরের ভার নিতে হবে । আমি বললাম—আমার দ্বারা ওসব হবে না । আমি পারব না। মালতী মিনতির সুরে বললে—লক্ষ্মীটি, নিতেই হবে। যাত্রা যে আমি কতকাল শুনি নি ! দেশের দলটা উৎসাহ না পেলে নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি আসরের ভার নিলেই আমি ওদের ব’লে পাঠাই । —ন, আমি পারবে না, সোজা কথা। তুমি ওবেল ও-রকম রাগ করে চলে গেলে কেন ? —তাই রাগ হয়েছে বুঝি ? কথার কথায় রাগ। —রাগ জিনিসটা তোমার একচেটে যে 1 আর কারও কি রাগ হতে আছে ?