পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 〉がか মালতীর মুখের স্বাভাবিক হাসি-হাসি ভাবটা যেন হঠাৎ নিবে গেল। বললে-কেন আসবেন না ? আখড়ার কত কাজ বাকি আছে মনে নেই ? ওর মুখ দেখে আমার আবার মনে হ’ল,—ওর কেউ নেই, এখানে ও একেবারে একা । ওকে বুঝবার মানুষ এই গ্রাম্য অশিক্ষিত বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের মধ্যে কে আছে ? আমার কাছেই ওর যা-কিছু অভিমান আবদার খাটে—ওর মধ্যে যে লীলাময়ী কিশোরী আছে, সে তার নারীত্বের দপ, গৰ্ব্ব ও অভিমান প্রকাশ ক’রে মুখ পায় একমাত্র আমার কাছে—আমি তা জানি । তা ছাড়া, ও এখনও বালিকা, ওর ওপর আমার মনে কি যে একটা অনুকম্পা জাগে.ওকে সকল দুঃখ, বিপদ থেকে আড়াল ক’রে রাখি ইচ্ছা হয়। শ্রাবণ মাসে নীল মেঘের রাশি দ্বারবাসিনীর চারিধারের দিগন্তবিস্তৃত তালীবন-শোভা মাঠের ওপর দিয়ে উড়ে যায় রোজ-আমি দীঘির ধারে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি, দেখে দেখে মনে কত কি অনির্দিষ্ট অস্পষ্ট আকাজক্ষা জাগে—মনে হয় ছোট কোন কলস্বনা গ্রাম্য নদীতীরে খড়ের ঘরে মালতীকে নিয়ে ছোট সংসার পাতবো...আমরা দুজনে এমনি সব বর্ষা-মেদুর শ্রাবণ-দিনে বসে বসে কত কথা বলব, কত আলোচনা করব । ওকে রাধতে দেব না, কাজ করতে দেব না, আমার কাছ থেকে উঠতে দেব না—কত বিশ্বাসের কথা, ভক্তির কথা, জ্ঞানের কথ, সাধু মোহন্তের কথা, আকাশের তারাদের কথা—ও আমায় বোঝাবে, আমি ওকে বোঝাবো ।- "কিন্তু তা হবার নয়। মালতী ওর বাপের আখড়া ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না—আমি অনেকবার ঘুরিয়ে প্রশ্ন ক'রে ওর মনের এ ইচ্ছা বুঝেছি। আমি ওকে চাই একান্ত আমার নিজস্ব-ভাবে—এখানে থাকলে ও দিনে রাতে কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে ওকে সে-ভাবে পাওয়া অসম্ভব । এই আখড়াই হয়েছে ওর আর আমার মধ্যে ব্যবধান । আমি এখান থেকে ওকে নিয়ে যেতে চাই । আমিও এখানে থাকতে পারব না চিরকাল । মালতীকে ভালবাসি, কিন্তু ওকে বিবাহ ক’রে এই রাঢ়অঞ্চলের এক গ্রাম্য আখড়ায় চিরকাল কি ক’রে কাটাবো বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী সেজে ? আমি ওকে নিয়ে যাব এখান থেকে । এক দিনের ব্যাপারে মালতীকে আরও ভাল ক’রে চিনলুম। দ্বারবাসিনী গ্রামের বৃদ্ধ শম্ভু বাড়য্যে চার-পাচ দিনের জরে যারা গেলেন। তিনি এখানকার সমাজের কাছে একঘরে ছিলেন—এটা আমি আগেই জানতাম। র্তার একমাত্র বিধবা কন্যাকে নিয়ে কি-সব কথা নাকি উঠেছিল—তাই থেকে গ্রামে শম্ভু বাড়য্যে একঘরে হন। শম্ভু বাড়য্যে কোথাও যেতেন না, কারও সঙ্গে মিশতেন না, তার হাতেও দু-পয়সা ছিল—সবাই বলত টাকার গুমর। বেলা পাচটার সময় মালতী এসে বললে—শুনেছেন ব্যাপার ? শঙ্কু বাড়য্যেকে এখনও বের করা হয় নি—আমি এতক্ষণ ছিলাম সেখানে । সেই দুপুর থেকে একজন লোকও ওদের বাড়ির উঠোন মাড়ায় নি। মড়া কোলে মেয়েটা দুপুর থেকে বসে আছে—ওর মা তো বাতে পঙ্গু, উঠতে পারে না। আপনি আসুন, দু-জনে মড়া তো দোতলা থেকে নামাই—তার পর উদ্ধব-জ্যাঠাকে বলেছি আখড়ার লোকজন নিয়ে আমাদের সঙ্গে যাবে—ব্রাহ্মণের মড়া অপর জাতে ছুলে ওদের কষ্ট হবে—তাই চলুন আপনি আর আমি আগে নামাই—তার পর আমাদেরই নিয়ে যেতে হবে অজয়ের ধারে—পারবেন তো ? তিনজনে ধরাধরি ক’রে সেই ঘোরানো ও সঙ্কীর্ণ সিড়ি দিয়ে মড়া নামানো—ও, সে এক কাও আর কি ! মালতী আর শম্ভু বাড়য্যের মেয়ে নীরদ এক দিকে—আমি অন্ত দিকে। নীরদ দেখলুম খুব শক্ত মেয়ে—বয়সে মালতীর চেয়ে বড়-বছর বাইশ হবে ওর বয়েস, মালতীর মত মেয়েলী গড়নের মেয়ে নয়, শক্ত, জোরালো হাত-প, একটু পুরুষ-ধরনের ; মালতী খুব ميه حسده .)ة .fR