পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NOR বিভূতি-রচনাবলী চুনবালি-খস দেওয়াল, কার্নিসের ফাটলে বট অশ্বখের গাছ। রান্নাঘরের এক দিকের ভাঙা দেওয়াল বাশের চাচ দিয়ে বন্ধ, কাৰ্ত্তিক মাসের হিম তাতে আটকাচ্ছে না। সীতার বড়-জ ওদিকে আর একটা উনুনে মাটির খুলিতে টাটুকা খেজুররস জাল দিচ্ছিলেন, তিনি বললেন—ষা হবার হয়ে গেল ভাই, এইবার তুমি একটা বিয়ে কর দিকি ? এই গায়েই বাড়য্যেবাড়িতে ভাল মেয়ে আছে, যদি মত দাও কালই মেয়ে দেখিয়ে দিই । সীতা চুপ ক’রে রইল। আমি বললাম—একটা সংসার ঘাড়ে পড়েছে, তাই অতি কষ্টে চালাই, আবার একটা সংসার চালাব কোথা থেকে দিদি ? সীতা বললে—বিয়ে আর কাউকে করতে বলি নে মেজদ, এ অবস্থায় বড়দারও বিয়ে করা উচিত হয় নি। তোমারও হবে না। তার চেয়ে তুমি সন্নিসি হয়ে বেড়াচ্ছিলে, ঢের ভাল করেছিলে । আচ্ছা মেজদ, তুমি নাকি খুব ধাৰ্ম্মিক হয়ে উঠেছ সবাই বলে ? আমি হেসে বললাম—অপরের কথা বিশ্বাস করিস নাকি তুই ? পাগল ! ধাৰ্ম্মিক হলেই হ'ল অমনি—না ? আমি কি ছিলাম, না-ছিলাম তুই তো সব জানিস সীতা । আমার ধাতে ধাৰ্ম্মিক হওয়া সয় না, তবে আমার জীবনের আর একটা কথা তুই জানিস নে, তোকে বলি শোন । 總 ওদের মালতীর কথা বললুম, দু-জনেই একমনে শুনলে । ওর বড়-জা বললে—এই তো ভাই মনের মত মানুষ তে পেয়েছিলে—ওরকম ছেড়ে এলে কেন ? আমি বললাম—এক তরফ । তাতে দুঃখই বাড়ে, আনন্দ পাওয়া যায় না। সীতা তো সব শুনলি, তোর কি মনে হয় । সীতা মুখ টিপে হেসে বললে—এক তরফ বলে মনে হয় না। তোমার সঙ্গে অত মিশত না তা হ’লে—বা তোমার সঙ্গে কোথাও যেত না । একটু চুপ করে থেকে বললে—তুমি আর একবার সেখানে যাও, মেজদা। আমি ঠিক বলছি তুমি চলে আসবার পরেই সে বুঝতে পেরেছে তার আখড়া নিয়ে থাকা ফাক কাজ। ছেলেমানুষ, নিজের মন বুঝতে দেরি হয়। এইবার একবার যাও, গিয়ে তাকে নিয়ে এস তো ? সীতা নিজের কথা বিশেষ কিছু বলে না, কিন্তু ওর ওই শাস্ত মৌনতার মধ্যে ওর জীবনের ট্র্যাজেডি লেখা রয়েছে । ওর স্বামী সত্যিই অপদার্থ, সংসারে যথেষ্ট দারিদ্র্য, কখনও বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু-পয়স আনবার চেষ্টা করবে না । এক ধরনের নিষ্কৰ্ম্ম লোকেরা মনের আলস্ত ও দুৰ্ব্বলতা প্রস্থত ভয় থেকে পূজা-আচ্চার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে, সীতার স্বামীও তাই । সকালে উঠে ফুল তুলে পূজো করবে, স্বানের সময় ভুল সংস্কৃতে স্তবপাঠ করবে, সব বিষয়ে বিধান দেবে, উপদেশ দেবে। একটু আদা-চ খেতে চাইলাম—সীতাকে বারণ করে বলে দিলে—রবিবারে আদা খেতে নেই। দুপুরে খেয়ে উঠেই বিছানায় গিয়ে শোবে, বিকেল চারটে পৰ্য্যন্ত ঘুমূবে— এত ঘুমুতেও পারে | এদিকে আবার ন’টা বাজতে না বাজতে রাত্রে বিছানা নেবে। সীতা বই পড়ে বলে তাকে যথেষ্ট অপমান সহ করতে হয়। বই পড়লে মেয়ের কুলটা হয়, শাস্ত্রে নাকি লেখা আছে ! দেখলাম লোকটা অত্যন্ত দুমুখও বটে। কথায় কথায় আমার মুখে একবার যীশুখৃষ্টের নাম শুনে নিতান্ত অসহিষ্ণু ও অভদ্র ভাবে বলে উঠল—ওসব মেচ্ছ ঠাকুর দেবতার নাম ক’রে ন। এখানে, এটা হিন্দুর বাড়ি, ওসব নাম এখানে চলবে না। . সীতার মুখের দিকে চেয়ে চুপ করে রইলাম, নইলে এ কথার পর আমি এ বাড়িতে আর জলস্পর্শ করতাম না। সীতা ওবেলা পারেস পিঠে খাওয়াবার আয়োজন করছে আমি জানি,