পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্ট্রি-প্রদীপ `రిన খুব কমই আসেন। e আমি লক্ষ্য করেছি এই মেয়েটি সকলের চেয়ে সজীব, বুদ্ধিমতী, অত্যন্ত চঞ্চল । সকলের চেয়ে সে বয়সে বড, সকলের চেয়ে সভ্য ও শৌধীন। কিন্তু তার একটা দোষ, কেমন একটু উদ্ধত স্বভাবের মেয়ে । একদিন কি একটা অঙ্ক ওকে দিলাম, সবাইকে দিলাম। ওর অঙ্কটা ভুল গেল। বললাম —তুমি অঙ্কটা ভুল করলে হিরণ ? অঙ্কটা ভুল গিয়েছে শুনে বোধ হয় ওর রাগ হ’ল—আর দেখেছি সব সময়, অপর কারোর সামনে বকুনি খেলে ক্ষেপে ওঠে। খুব সম্ভব সেই জন্তই ও রাগের মুরে বললে—কোথায় ভুল ? কিসের ভুল বলে দিন না ? আমি বললাম—কাছে এস, অত দূর থেকে কি দেখিয়ে দেওয়া যায় ? আমি দেখে আসছি যে কদিন ও এসেছে, আমার কাছ থেকে দূরে বসে। ও উদ্ধতভাবে বললে—কেন ওখান থেকেই বলুন না ? আপনার কাছে কেন যাব ? আমার মনে হ’ল ও বড মেয়ে ব’লে আমার কাছে আসতে বোধ হয় সঙ্কোচ অনুভব করে । কিন্তু তার জন্তে ওরকম উদ্ধত মুর কেন ? বহালাম—কাছে এসে জাক দেখে নিতে দোষ আছে কিছু ? ও বললে—সে-সব কথার কি দরকার আছে ? আপনি দিন অঙ্ক ওখান থেকেই বুঝিয়ে । রাগে ও বিরক্তিতে আমার মন ভরে উঠল। আচ্ছা মেয়ে তো ? মাস্টারদের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তার এই কি ধরন ? আর আমায় যখন এত অবিশ্বাস তখন আমার স্কুলে না এলেই তে হয় ? সেদিন আমি ওর সঙ্গে আর কোন কথাই বললাম না । পরদিনও তাই, স্কুলে এল, নিজে বসে বসে কি লিখলে বই দেখে, একটা কথাও কইলাম না। ছুটির কিছু আগে আমায় বললে—আমার ইংরিজিটা একবার ধরুন না ? আমি ওর পড়াটা নিয়ে তারপর শাস্তভাবে বললাম—হিরণ, তোমার বাড়িতে ব’লে, আমি তোমাকে পড়াতে পারব না। অন্য অবস্থা করতে ব'লো কাল থেকে । হিরন্ময়ীর মুখে বিস্ময় ফুটে উঠল, বললে—কেন ? আমি বললাম—না—তুমি বড় মেয়ে, এখানে তোমার সুবিধে হবে না। ও বললে—রাগ করছেন নাকি ? কি করেছি আমি ? আমি বললাম—কাল তোমার ও-কথাটা কি আমার বলা উচিত হয়েছে, হিরণ ? কি ব’লে তুমি বললে, আপনার কাছে কেন যাব ?.ওখান থেকেই বলুন না ? তুমি আমার কাছে তবে পড়তে এসেছ কেন ? হিরন্ময়ী হেসে বললে—এই ! তা কি এমন বলেছি আমি ? তা যখন আপনি বলছেন দোষ হয়েছে বলতে, তখন দোষ নিশ্চয়ই হয়েছে । —কেন তুমি বললে ও রকম ? তোমার দুঃখিত হওয়া উচিত ও কথা বলার জন্তে, তাজান ? হিরন্ময়ী বললে—ই, হয়েছি । হ’ল তো ? এখন নিন। তারপর যখন ওর অঙ্ক দেখছি, তখন হঠাৎ আমার মুখের দিকে কেমন একটা বুঝতে না পারার দৃষ্টিতে চেয়ে বললে—উ, আপনার এত রাগ ...আগে তো কখনও রাগ দেখি নি এরকম ?”তখনও সে আমার মুখের দিকে সেইরকম দৃষ্টিতে চেয়ে কি যেন বুঝবার চেষ্টা করছে। ওর রকমন্সকম দেখে আমি হাসি চাপতে পারলাম ন-সঙ্গে সঙ্গে সেই মুহূর্তে হিরন্ময়ীকে নতুন চোখে দেখলাম। দেখলাম হিরন্ময়ী অত্যন্ত লাবণ্যময়ী, ওর চোখ দুটি অত্যন্ত