পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X8 e বিভূতি-রচনাবলী ডাগর, টান-টানা জোড়া ভুরু দুটি কালো সরু রেখার মত, কপালের গড়ন ভারী মুন্দর, চাচা, ছোট, অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি। মাথায় একরাশ ঘন কালো চুল। ও তখনও আমার দিকে সেই ভাবেই চেয়ে আছে। এক মিনিটের ব্যাপারও নয় সবটা মিলে। পরদিন থেকে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, হিরন্ময়ী আমার কাছ থেকে তত দূরে আর বসে না—আর না ডাকলেও কাছে এসে দাড়ায় । একদিন আমায় বললে—জানেন মাস্টার মশায়, আমার সব দল এরা—আমায় এরা ভয় করে । অবাক হয়ে বললুম—কারা ? হাত দিয়ে পাঠশালার সব ছাত্রছাত্রীদের দেখিয়ে দিয়ে বললে—এরা। আমার কথা না শুনে কেউ চলতে পারে না । —ভয় করে কেন ? —এমনি করে। আমি যা বলব ওদের শুনতেই হবে। পাঠশালার সকলেরই ওপর সে হুকুম ও প্রভুত্ব চালার, এটা এতদিন আমার চোখে পড়ে নি—সেদিন থেকে সেটা লক্ষ্য করলাম। তবে পেনে যে সেদিন ওর হাত আঁচড়ে দিয়েছিল সে আলাদা কথা। দেশের রাজার বিরুদ্ধেও তো তার প্রজার বিদ্রোহী হয় ! রোজ রাত্রে বাসায় এসে সন্ধ্যাবেলা পরোটা গড়ি। দু-একদিন পরে সন্ধ্যাবেলা ময়দা মাখছি এক রান্নাঘরে বসে, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার বেশী নয়, একটা হারিকেন-লণ্ঠন জলছে ঘরে। কার পায়ের শব্দে মুখ তুলে দেখি ঘরের মধ্যে দাড়িয়ে হিরন্ময়ী। শশব্যস্তে উঠে বিম্মিত মুখে বললাম—হিরণ ! এস, এস, কি মনে ক’রে ? 3. হিরন্ময়ীর একটা স্বভাব গোড়া থেকে লক্ষ্য করেছি, কখনই প্রশ্নের ঠিক জবাবটি দেবে না। আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে বললে—ময়দ মাখেন বুঝি নিজে রোজ ? ওই বুঝি ময়দা মাখা হচ্ছে ? আমি বিপন্ন হয়ে পড়লুম—চোদ্দ বছরের মেয়েকে পাড়াগায়ে বড়ই বলে। আমার কাছে এ রকম অবস্থায় আসাটা কি ঠিক হ’ল ওর ? এসব জায়গার গতিক আমি জানি তো । বললাম—তুমি যাও হিরণ, পড় গে। হিরন্ময়ী হেসে বললে—তাড়িয়ে দিচ্ছেন কেন ? আমি যাব নী—এই বসলাম । বেজায় একগুঁয়ে মেয়ে, আমি তো জানি ওকে। বললে—একটা অঙ্ক কষে দেবেন ? না —থাক, একটা গল্প বলুন না "ও, আপনি বুঝি ময়দা মাখবেন এখন ! সরুন, সরুন দিকি । আমি মেখে বেলে দিচ্ছি। কি হবে, রুটি না লুচি ? “আপনি এই পিড়িটাতে বসে শুধু গল্প করুন । সেই থেকে হিরন্ময়ীর রোজ সন্ধ্যাবেলা আমাকে সাহায্য করতে আসা চাই-ই। মৃন্থ প্রদীপের আলোতে হালি-হাসি মুখে সে তার খাতাখানা খুলে নামে অঙ্ক কষে—কাজে কিন্তু সে আমার রুটি-পরোটা তৈরী ক’রে দেয়। কিছুতেই আমার বারণ শোনে না-ওর সঙ্গে পারব না বলে আমিও কিছু আর বলি নে। ওর মায়ের বারণও শোনে না, একদিন কথাটা আমার কানেগেল। শুনলাম একদিন মাকে বলছে ওদের বাড়ির উঠোনে দাড়িয়ে—কেন, যাই তাই কি ? অামি অঙ্ক কষতে ৰাই । বেশ করি—যাও ।