পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8Þ বিভূতি-রচনাবলী আসতে। আমার শীত করছে কিনা। রাত বেশী, ঠাণ্ডা পড়েছে, গায়ে দেবার একটা মোটা চাদর দেবো? আরব্য-উপস্তাসের মত গল্প আর নেই। আচ্ছ, অঙ্ক কতদূর শেখা যায় ? বিষ্কার শেষ নেই—না ? এম-এ পাস করে আরও পড়া যায়, পড়বার আছে ? ওর বাবা এলেন পরদিন সকাল দশটার সময়। র্তার মুখে শুনলুম পুলিস থেকে তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে শীঘ্র বাড়ি এসে মেয়ের ভার নিতে । তিনি অত্যন্ত বদমেজাজী লোক, দু-একটা কথা শুনেই বুঝতে দেরি হ'ল না। আমার ওপর আদৌ তিনি প্রসন্ন হতে পারলেন নHর্তার মেয়ের তত্ত্বাবধান করার জন্যে একটা ধন্যবাদ দেওয়া তো দূরের কথা, সেটাকেই তিনি আমার একটা অপরাধ বলে গণ্য ক’রে নিলেন এবং যে মুখুয্যে ও চৌধুরীর পরশু সন্ধ্যেবেল হিরন্ময়ীকে বাড়িতে জায়গা দিতে চায় নি, তাদেরই বাড়িতে থোশমোদ ক’রে তাদের সঙ্গে এ বিপদে পরামর্শ চাইতে গেলেন । আরও একটা ব্যাপার দেখলুম, তিনি হিরন্ময়ীকে আদৌ দেখতে পারেন না। আমার সামনেই তো তাকে তাড়না, তর্জন-গর্জন যথেষ্ট করলেন এ নিয়ে যে সেরাত্রে চৌধুরী-গিয়ীর পায়ে পড়ে কেন অঙ্গুরোধ করে নি তাকে জায়গা দেবার জন্তে। কারণ, তারা দেখলুম লাগিয়েছে যে তাদের কি আর ইচ্ছে ছিল না ওকে জায়গা দেবার ? ও মেয়ের তা ইচ্ছে নয়। হিরণের অপরাধ সে মুখ ফুটে কারও কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে নি। এ ওরা বুঝল না যে হিরণের বয়সের মেয়েরা মুখে কোন নাটুকে-ধরনের কথা বলে আশ্রয় চাইতে পারে না পরের কাছে— বিশেষ ক’য়ে হিরন্ময়ীর মত একটু তেজী মেয়েরা। আমি হিরন্ময়ীর ভার থেকে মুক্ত হয়ে কালীগঞ্জে চলে এলুম পরদিন সকালেই। শুনেছিলুম হিরন্ময়ীর মা ও দিদি রাণাঘাট থেকে প্রমাণাভাবে খালাস পেয়ে এসেছেন । কালীগঞ্জে এসে বসলুম বটে, কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলুম, মনের কি অদ্ভুত পরিবর্তন হয়েছে। হিরন্ময়ীর সেই শুকনো মুখখানা কেবলই মনে পড়ে, সেদিন সন্ধ্যার সময় ওর যে মুখ দেখেছিলাম, যেদিন ওর মাকে আর দিদিকে থানায় নিয়ে গেল। হিরন্ময়ীর ব্যথা, . হিরন্ময়ীর দুঃখ, “ওই রকম বাড়িতে, ওই গায়ের আবহাওয়ায় হিরন্ময়ীর মত মেয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়বে। কে-ই বা দেখবে, বুঝবে ওকে ? একদিন মালতীর সম্বন্ধেও ঠিক এই কথাই ভাবতুম। কত ভেবেছি। এখন বুঝি কি দুর্জয় অভিমান করেই চলে এসেছিলাম ওর কাছ থেকে ! কিছুতেই সে অভিমান ভাঙলো না । তার পর দাদা মারা গেলেন, দাদার সংসার পড়ল ঘাড়ে, নইলে হয়ত আবার এতদিনে ফিরে যেতাম। কিন্তু বৌদিদিদের নিয়ে তো দ্বারবাসিনীর আখড়াতে গিয়ে উঠতে পারি নে ? একসময় যার ভাবনায় কত বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি বটেশ্বরনাথ পাহাড়ে, সেই মালতী এখন আমার মনে ক্রমশঃ অস্পষ্ট হয়ে আসছে— হয়ে এসেছে। আর তো তাকে চোখে দেখলুম না ? ক্রমে তাই সে দুরে গিয়ে পড়ল। কি করব, মনের ওপর জোর নেই—নইলে আমি কি বুঝতে পারি নে কত বড় ট্র্যাজেডি এটা মামুষের জীবনের ? শ্রীরামপুরের ছোট-বৌঠাকুরুণ আজ কোথায় ? কে বলবে কেন এমন হয় ! ዘ »ዓ ዘ একদিন আবার হিরন্ময়ীকে দেখবার ইচ্ছে হ'ল। তখন মাস দুই কেটে গিয়েছে, কামালপুরে আর বাই নি, সেখানে আমার বাসার জিনিসপত্র এখনও রয়েছে—সেগুলো আনবার ছুতে