পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>(?や বিভূতি-রচনাবলী জঙ্গলের গা ধরিয়া অাধপোয়া পথ গেলে বেত্রবতী নদী—স্থানীয় নাম বেতন । বনজঙ্গলের দরুন দিনের বেলাও হাটতলাটা যেন খানিকট অন্ধকার দেখায়, রাত হইলে হাটতলায় লোকজন থাকে না, দু’একখানা যা দোকানপত্র আছে, দোকানীরা বন্ধ করিয়া চলিয়া যাইবার পরে হাটতলা একেবারে নির্জন হুইয়া পড়ে, বনে, ঝোপেঝাড়ে বঁাশবাগানে জোনাকী জলে, কচিৎ ফুটন্ত ঘেটুকোল ফুলের দুর্গন্ধ বাহির হয়, উত্তর দিকের শিমুলগাছটায় পেচা ডাকে, আমি এক বসিয়া ভাত রাধি, কোন কোন দিন ভাত চড়াইয়া দিয়া একতারাটা হাতে লইয়া আপন মনে গান করি। আজ ছয় সাত মাস একটা পয়সা আর নাই। হাটে ঢেঁড়া পিটাইয়া দিয়াছি, চার আনা ভিজিট লইব, ওষুধের দাম দাগপিছু এক আনা। তবুও রোগীর দেখা নাই। ভাগ্যে মুজিবর রহমান লোকটা ভাল, নিজের দোকান হইতে আজ চার পাট মাস ধারে চাল ডাল দেয়, তাই কোন রকমে চলিতেছে । গোয়াল-পাড়ায় দামু ঘোষের বাড়ি একটা নিউমনিয়া কেস ছিল গত মাসে । মুজিবর এদিকের মধ্যে মাতব্বর লোক, সবাই তার কথা মানে, তাকে ধরিয়া সুপারিশ করাইয়াছিলাম দামু ঘোষের কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমায় না ডাকিয়া ডাকিল গিয়া বলরামপুরের অবিনাশ সেক্র কবিরাজকে । অবিনাশ কবিরাজের ওপর তাদের নাকি অশেষ বিশ্বাস । মুবাসিনীকে লইয়া হইয়াছে মুশকিল। বিবাহ করিয়া পৰ্য্যন্ত তাকে বাপের বাড়ি ফেলিয়া রাখিয়াছি। একখানা ভাল কাপড় পৰ্য্যন্ত কোন দিন দিতে পারি নাই, ছেলেটির দুধের দাম সাত আট টাকা বাকী, শাশুড়ী ঠাকুরুণ তাগাদা করিয়া চিঠি দেন ; কোথায় পাইব সাত আট টাকা, নিজেই পাই না পেটে থাইতে । টাকা দিতে পারি না বলিয়া শাশুড়ী ঠাকুরুণ মহা অসন্তুষ্ট, তিনি ভাবেন কত টাকাই না রোজগার করিতেছি ডাক্তারীতে ! কেহ বলিলে হয়তো বিশ্বাস করিবে না, আজ চার পাচ মাস এক রকম শুধু ভাত খাই। পাড়াগ হইলেও এখানে জিনিসপত্র উৎপন্ন হয় না বলিয়া অতিরিক্ত আক্রা–পটল দুই আন৷ সের, আলু ছয় পয়সা । মাছ চার আনা ছয় আনার কম নয়। কেহ দেখিতে পাইবে বলিয়া খুব ভোরে নদীর ধার হইতে শুশুনি আর র্কাচড়াদাম শাক তুলিয়া আনি মাঝে মাঝে । আজকাল আমের সময়, শুধু আম ভাতে আর ভাত ; কতদিন শুধু তুন দিয়াই ভাত খাইয়াছি। পাসকরা ডাক্তার নই, কিন্তু তাতে কি ? বাড়ি বসিয়া বই পড়িয়া কি আর ডাক্তারী শেখা যায় না ? আজ সাত আট বছর তো ডাক্তারী করিতেছি, অভিজ্ঞতা বলিয়া একটা জিনিসও তো আছে! পাসকরা ডাক্তারের হাতে কি আর রোগী মরে না ? ধোপাখালির ইন্দু ডাক্তার আসিয়া বিধু গোরালিনীর মেয়েটাকে বাচাইতে পারিয়াছিল ? তবে কেন যে দুষ্ট লোকে রটাইয়াছে, মণি ডাক্তারের ওষুধ খাইলে জ্যান্ত মানুষ মরিয়া ভূত হয়, ইহার কারণ কে বলিবে ? আমি গরীব বলিয়া আমার দিকে কেউ হয় না, এক মুজিবর ছাড়া—ঐ লোকটা আজ তিন চার মাস বিনা আপত্তিতে নিজের দোকান হইতে চাল ডাল না দিলে আমাকে উপবাস করিতে হইত। সে আমার জন্য যত করিয়াছে, এ অঞ্চলের কেহ তাহার সিকিও কোনদিন করে নাই। তাহার ঋণ কখনও শোধ করিতে পারিব না। এ সব অজপাড়াগ । রেলস্টেশন হইতে দশ বারে ক্রোশ দূরে। কাছে কোন বড় বাজার কি গঞ্জ নাই, লোকজন নিতান্ত অশিক্ষিত ; রোগ হইলে ডাক্তার ডাকার বদলে জল-পড়, তেল-পড়া দিয়া কাজ সারে। ফকির ডাকাইয়া ঝাড়ফুক করে, বলে অপদেবতার দৃষ্টি হইয়াছে। ডাক্তার ডাকিবার রেওয়াজই নাই। 3 • جمعے *