পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ & থেকে ভয়ে ভয়ে আপনি যাবে। মাথার ওপর কেউ নেই, বেজায় বেয়াড়া হয়ে উঠচে দিন দিন । তারপর আমার হাত দুখান খপ করে ধরে ফেলে মিনতির স্বরে বললে, এই উবগারটুকু তোমাকে করতে হবে বাবা জিতু—আমার কেউ নেই, কাউকে বলতে পারি নে, বেী মানুষ, কপালই না হয় পুড়েচে, কিন্তু কি বলে যার-তার সঙ্গে কথা কই বলে তো বাবা ? ব’লে একটু ভুবনকে বুঝিয়ে । Q এই ভুবনের মা এ বাড়িতে কি রকমে ঢুকলে, মার মুখে সে কথা আমি শুনেচি। এই গায়েই ওর বাড়ি। ওর এক সতীন আছে, স্বামী মারা যাওয়ার পরে সম্পত্তির অৰ্দ্ধেক ভাগ পাছে দখল করতে না পেরে ওঠে, এই ভয়ে জ্যাঠামশায়ের নামে বুঝি লেখাপড় ক'রে দেয়। কথা থাকে, এর ওদের দুজনকে চিরকাল খেতে পরতে দেবে। কিন্তু এ বাড়িতে ভুবনের মা আছে চাকরানীরও অধম হয়ে। রাধুনীকে রাধুনী, চাকরানীকে চাকরানী। আর এত হেনস্থাও সবাই মিলে করে ওকে ! ভুবনের মা হয়েচে এ সংসারে অমঙ্গলের থার্মোমিটার। অর্থাৎ মঙ্গল যখন আসে, তখন ভুবনের মায়ের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই—অমঙ্গল এলেই কিন্তু ভূবনের মায়ের দোষ । জ্যাঠাইমা অমনি বলবেন—যেদিন থেকে ও আমার বাড়ি ঢুকেচে, সেইদিন থেকেই জানি এ বাড়ির আর ভাস্তি নেই। সাত কুল থেয়ে যে আসে, তার কি আর—তখুনি কৰ্ত্তাকে বলেছিলাম ও পাপ ঢুকিও ন সংসারে, তা কাঙালের কথা বাসি হ'লে মিষ্টি লাগে! আমি নিজের কানে কতদিন এ ধরনের কথা শুনেচি। মা বলেন, ভুবনের মায়ের মত বোকা লোক তিনি কখনো দেখেননি । চৈত্র মাসের গোড়ার দিকে মেজকাকার ছেলে সলিল বললে—জানো জিতুদ, মঙ্গলবারে আমাদের বাড়িতে গোপীনাথ জীউ ঠাকুর আসবেন ? ও-পাডায় মেজ-জ্যাঠামশায়দের বাড়ি ঠাকুর এখন আছেন, মঙ্গলবারে আসষেন, দু-মাস থাকবেন, তারপর আবার হরিপুরের বৃন্দাবন মুখুয্যের বাড়ি থেকে তারা নিতে আসবে। বছরে এই দু-মাস আমাদের পালা। দাদাও সেখানে ছিল, বললে,—খুব খাওয়ান-দাওয়ান হবে ? সলিল বললে—যে-দিন আসবেন, সে-দিন তো গায়ের সব ব্রাহ্মণের নেমস্তয়, তা ছাড়াও রোজ বিকেলে শেতল হবে, রাত্তিরে ভোগ—সে ভারি খাওয়ার মজা । দাদা ও আমি দু-জনেই খুশী হয়ে উঠি । মঙ্গলবার সকাল থেকে বাড়িতে বিরাট হৈ-চৈ পড়ে গেল, ঠাকুরঘর ধোওয়া শুরু হ’ল, বাসন-কোসন কাল বিকেল থেকেই মাজাঘষা চলচে, { ভুবনের মা রাত থাকতে উঠে রান্নাঘরে ঢুকেচে, পাড়ার অনেক কি-বোঁ অবিপ্তি ষথেষ্ট কাজে •সাহায্য করচে, একটি দল তো কাল রাত থেকে তরকারি কুটচে একরাশ । কাকীমার কাল বিকেল থেকে ক্ষীরের সন্দেশ ও নারকেলের লাড় গড়তে ব্যস্ত আছেন। ঝিটুকিপোতার গোলাবাড়ি থেকে গাড়িখানেক আখ, শশা, কলা, নারকোল এসেচে, সেগুলো কাট, ছাড়ানো ব্যাপারে বাড়ির ছোট ছোট মেয়েদের নাইয়ে ধুইয়ে ধোওয়া কাপড় পরিয়ে লাগানো হয়েচে । বাড়ির ছেলেমেয়ের সকাল সকাল স্নান সেরে ধোয় ধুতি-চাদর গায়ে ঠাকুর আনতে গেল কর্তাদের সঙ্গে, তারাও গরদের জোড় পরে আগে আগে চলেচেন। ছেলেরা কাসর-ঘণ্টা বাজিয়ে বেলা দশটার সময় তাদের সঙ্গে ঠাকুর নিয়ে ফিরলো। জ্যাঠাইমা জলের ঝারা দিতে