পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किझन्न लटल * SW3& মুড়ি খেতে দেওয়ার মানে কি ? আমায় বললেন, রাখ মুড়ি, পাচ-ছখানা রুটি পড়ে রয়েছে পাতে, ওগুলো উঠবে কি ক'রে ? পরের পাতের ঘাট জিনিস খেতে আমার ঘেন্না করে । কিন্তু ঠাকুরমার ভয়ে কিছু বলতে পারলুম না। ঠাকুরমা ঢাকা খুলে পাতের খাবার আমায় খেতে দিলেন। খাবার সময়েই আমার কান্না এল মায়ের কথা ভেবে । মিথ্যে মিথ্যে ঠাকুরমা মাকে বকলেন কেন ? মা হয়তো জানত না পাতের খাবার ঢাকা আছে। ভাবলুম, মায়ের প্রতি এমন একটা কিছু দেখাব, যাতে মায়ের মনের কষ্ট দূর হয়, কিন্তু চার বছর তখন আমার বয়স, না পারি কথা গুছিয়ে বলতে, না পারি কিছু বোঝাতে। হতে খুব শক্ত করে মায়ের গলা জড়িয়ে রাত্রে শুয়েছিলুম, এ ছাড়া সহানুভূতি দেখানোর অন্ত কোন উপায় আমার জানা ছিল না সে বয়সে। মধ্যে কিছুদিনের কথা আমার তত মনে পড়ে না, আমার যখন মায়ের কথা মনে পড়ে তখন মার খুব অমুখ। কি অমুখ জানতুম না তখন । নীচের একটা ঘরে মা থাকতেন, আমাকে মার কাছে যেতে সবাই বারণ করে দিয়েছিল । কিন্তু আমাকে ধ’রে রাখা সোজা কথা নয়, ফাক পেলেই আমি মার ঘরে ঢুকতুম, খানিকক্ষণ ধরে মার সঙ্গে কি সব কথা কইতুম। তারপর সন্ধান পেয়ে ওরা এসে ধ’রে নিয়ে যেত । ঠাকুরমার কাছে বকুনি খেতে হ’ত ওঘরে যাওয়ার জন্তে । এরকম চলল দু দশ দিন নয়, অনেক—অনেকদিন, কতদিন তা আমার জানবার বয়স হয়নি। মোটের ওপর অনেকদিন । এখন মনে হয় সাত আট মাসের কম নয়। একদিন শুনলুম মায়ের অমুখ নিয়ে বাবার সঙ্গে ঠাকুরমার ঝগড়া হচ্ছে। ঠাকুরমা বলছেন, আর ওর পেছনে পয়সা খরচ ক’রে কি হবে ? আমার ছেলেমেয়েগুলো কি পথে দাড়াবে ? সংসারের টাকা দিয়ে দামী দামী ওষুধ এল কত এই ক-মাসে, তাতে কিছু যখন হ'ল না, তখন আর আমি বেশি টাকা খরচ করতে দেব না । বাবা বলছেন, তা বলে একটা মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরবে চোখের সামনে ? ঠাকুরমা বললেন, চিকিচ্ছে কম হয়নি কিছু। এখনও তো চিকিচ্ছের ক্রটি নেই, কিন্তু আর আমি তোমায় টাকা দোব না। যে বাচবে না, তার পেছনে আর কেন টাকা খরচ ? সেদিন বুঝলুম, মার অমুখ খুব গুরুতর। মন খুব খারাপ হয়ে গেল, সমস্ত বাড়ির মধ্যে আমার মন টানে কেবল মায়ের ঘরে । যখন মন খারাপ হয়, মার কাছে গেলে সব দুঃখ চলে যায়। কিন্তু সেখানে যখন তখন যাবার যো নেই। লুকিয়ে যেতে হবে, নইলে ঠাকুরমাকে পিসীমা বলে দেবেন। ছোটপিসীমা আমার কোলে ক’রে পুকুরধারে নিরে যাবে চলে। ওদের সঙ্গে আমি তো জোরে পারি না ! পুকুরধারে বড় চাপাফুলের গাছ আছে। তার তলার ছোটপিলীমা আমায় নিয়ে গিয়ে বলত, ওরকম যেও না যখন-তখন ও ঘরে ; যেতে নেই। এখানে বসি । মা ভিন্ন সংসারটা আমার কাছে ফাকা । মা ছাড়া আর কিছু বুঝি না, আর কাউকে ভাল লাগে না—কেবল দিদিমা ছাড়া । দিদিমা নিতান্ত গরীব, আমার মা তার একমাত্র মেয়ে । মাঝে মাঝে তিনি যখন এসে আমাদের বাড়ি থাকতেন, রান্নাঘরের কাজকৰ্ম্ম নিয়ে তাকে ব্যস্ত থাকতে হ’ত সদাসৰ্ব্বদা । তিনি যেন এসে হতেন আমাদের বাড়ির রাধুনী। মায়ের অমুখের সময় তিনি এসেছিলেন, এবং রোগীর সেবা করবার জন্ত তিনি ছাড়া আর লোক ছিল না । মায়ের খাওয়ার আলাদা একখানা খাল, গেলাস ও বাট ছিল। দিদিমা খাল বাটি