পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>やレ* বিভূতি-রচনাবলী এই সেই আংটি আমার হাতে এখনও রয়েছে। আমার বন্ধু চুপ করল। আবার চোখে জল এল। বহুকাল আগেকার এক রোগজীর্ণ তরুণী মায়ের ছবি মনে এল—অসহায় বন্ধুহীন সংসারে যার একমাত্র অবলম্বন ছিল ছ বছরের ছেলেটি আর দুর্ভাগা স্বামী । আমার বন্ধু এখন খুব বড়লোক, অনেকগুলো কয়লার খনির মালিক। র্তার সাকুলার রোডের বাড়িতে বসে চা-পানের পরে সন্ধ্যাবেলা আমরা কথা বলছিলুম। তারপরে তিনি ওপরের গল্পটা বললেন । খানিকটা চুপ করে থেকে আমি বললুম, তারপর কি হ’ল ? রাত্রে কি হয়েছিল আর জানি না। ওরা এসে পড়বার পরেই আমি ঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলুম। তারপর ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে উঠে মাকে আর দেখি নি! আমার ছেলেবেলাকার মা রাত্রের মধ্যেই অদৃপ্ত হয়ে গেলেন। এই রকম সন্ধ্যায় আবার সেই কতকাল আগের কথা—সেই সুন্ধ্যাটি আমার মনে আসে। খোলগল্প জীবনে এমন সব অভূত ঘটনা অনেক সময় ঘটে, যা লিখিতে বসিলে যেন গল্পের মত শোনায়। আমার জীবনে এমনি ধরণের ঘটনা একটি ঘটিয়াছিল, ঘটিয়াছিলই বা কি করিয়া বলি— ঘটিয়াছে বলাই সঙ্গত, কারণ তাহার জের এখনও চলিতেছে। যদিও বাহিরের দিক হইতে তাহার জের কিছুই নাই, যা কিছু ঘটতেছে সবই আমার ও আর একজনের মনে । প্রেমের কাহিনী এ নয়, কিসের কাহিনী বলা শক্ত। এত সুক্ষ্ম ও বস্তুবিহীন তার ঘটনা, যেন মাকড়সার জলে বোন কাপড়—জোর করা চলে না তার উপর—একটু বেশী বা একটু কম কথা বলিলেই ঘটনার স্বল্প রহস্যটুকু একেবারে বিনষ্ট হইয়া যাইবে। তাই খুব সতর্কতার সহিত ব্যাপারটি বলিতে চেষ্টা করিতেছি। আর ভূমিকা করিব না, এখন গল্পট বলি । প্রথমেই আমার একটু পরিচয় দিয়া লই । যাহারা এ গল্প পড়িবেন, তাহদের প্রতি আমার অনুরোধ একটা লাইনও যেন বাদ দিবেন না—মনে রাথিবেন, এর প্রতি লাইনের প্রয়োজনীয়তা আছে, গল্পটিকে সম্যক বুঝিতে হইলে । ষে-সময়ের কথা বলিতেছি তখন আমি বিবাহ করি নাই, করিবার ইচ্ছাও ছিল না। কেন কি বৃত্তান্ত সে-সব গল্পের পক্ষে অবাস্তর। সুতরাং সে-কথার দরকার নাই। বিবাহ করি নাই বলিয়া ভবঘুরেও ছিলাম না। ছোট একটি ব্যবসা ছিল । তাহা হইতে ফু-পয়সা রোজগারও হইত। এখন সে-ব্যবসা আরও বাড়িয়াছে। কাজের খাতিরে মাঝে মাঝে দেশ-বিদেশে ঘুরিতে হইত, এখনও হয়। কলিকাতার বাড়ি এখনও করি নাই তবে হিতাকাজুকী বন্ধুবান্ধবগণ যেমন ধরিয়া পড়িয়াছেন, তাহাতে বাড়ি না করিলে আর চলে না—চক্ষুলজ্জার খাতিরেও অন্তত: করিতে হইবে । বালিগঞ্জ অঞ্চলে সুবিধামত জমি দেখিতেছি। এই হইতেই আমার মোটামুটি পরিচয় আপনারা পাইলেন। বর্ধমান জেলার বনপাশ স্টেশনে নামিয়া উত্তর দিকে বাধানো সড়ক ধরিয়া সাত-আট মাইল