পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किल्लग्नलल >&న গরুর গাড়ি করিয়া গেলে দিয়াখালি বলিয়া একটি গ্রাম পড়ে। এখানে আমার এক সহপাঠীর বাড়ি । এই অঞ্চলে ব্যবসা উপলক্ষে মাঝে মাঝে যাইতাম,। অর্থাৎ আখের গুড় কিনিতে বনপাশ হইতে ছমাইল দূরবর্তী জগন্নাথপুরের হাটে আমাকে মাঘ ফাল্গুন মাসে প্রতি বৎসর যাইতে | যখনই গিয়াছি দিয়াখালি গ্রামে আমার সেই সহপাঠীর বাড়িতে গিয়া একবার করিয়া তাহার সঙ্গে দেখা করিয়া আসিতাম। কলিকাতায় কলেজে একসঙ্গে বি-এ পড়িয়াছিলাম, আমার সে বন্ধুটি বি-এ পাস করিতে পারে নাই, গ্রামেরই মাইনর স্কুলে অনেকদিন হইতেই সে হেডমাস্টারি করিতেছে । আমার বন্ধুর স্ত্রী পল্লীগ্রামের বধু যদিও, আমার সামনে বাহির হইয়া থাকেন তো বটেই, আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ নিঃসঙ্কোচ ব্যবহার করেন, তাহাদের পরিবারেরই একজনের মত। মেয়েমাকুবের যেমন স্বভাব, যখনই যাই, আমার বন্ধুপত্নী আমায় বাধা নিয়মে অনুযোগ করিতেন, আমি কেন বিবাহ করিতেছি না। এ-নিয়মের ব্যতিক্রম যতবার সেখানে গিয়াছি কখনও ঘটিতে দেখি নাই । —শুনুন, এবার একটি বড়সড় দেখে, এই ফাল্গুন মাসের মধ্যেই বিয়ে ক’রে ফেলুন। না —শুমুন আমার কথা—এর পরে কে দেখবে শুনবে, সেটাও তো ভাবতে হবে ? বিয়ে ক’রে ফেলুন। এ ধরণের কথা শুধু আমার বন্ধুপত্নীর মুখ হইতে যদি শুনতাম, হয়তো আমার মনে একটা কিছু রেখাপাত করিলেও করিতে পারিত। কিন্তু আমি তো এক দিয়াখালি গ্রামেই ঘুরি না— সারা বাংলা দেশের কত জেলায়, কত গ্রামে, কত শহরে কার্ধ্যোপলক্ষে ঘুরিতে হয় এবং প্রায় অনেক স্থানেই হিতাকাজী বন্ধুবান্ধবের মুখ হইতে ঐ একই কথা শুনিয়া আসিতেছিলাম। আমার মালীম, পিসীমা এবং অন্তান্ত আত্মীয়া-কুটুম্বিনী সমস্ত এ-বিষয়ে যথেষ্ট অধ্যবসায় ও ধৈৰ্য্যের পরিচয় দিয়া আসিতেছিলেন—ঘরে বাহিরে এভাবে অবরুদ্ধ হওয়ায় জিনিসটা আমার যথেষ্ট গা-সহ-গোছের হইয়া পড়ার দরুণ কোনো প্রস্তাবই তেমন গায়েও মাখিতাম না বা নূতন কিছু বলিয়া ভাবিতাম না। - একবার দিয়াখালি গিয়াছি মাঘ মাসে, আমার বন্ধুপত্নী সেবার যে-কথা বলিলেন, তাহ শুনিয়া রীতিমত কৌতুক অনুভব করিলাম। বলিলেন—আমি কিন্তু এক জায়গায় আপনার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। একটু কৌতুক করিয়াই বলিলাম—কি রকম ? —আজ প্রায় ছ-সাত মাস আগে আমাদের এখানে শিবতলায় বারোয়ারি শুনতে গিয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে আমার খুব ভাব হয়। মেয়েটি এ গায়ের নয়—তার দিদিমার সঙ্গে গরুর গাড়ি ক’রে পাশের গা বারোদীঘি থেকে যাত্রা শুনতে এসেছিল । বেশ মেয়েটি, চমৎকার গড়নপিটন, লম্ব, একহারা চেহারা। কেবল রংটি ফর্স নয়, কালো। খুব কালো না হলেও ’ কালোই মোটের উপর। নামটা ভুলে গেচি—খুব সম্ভব মণিমালা। উৎসাহ দিবার স্বরে বলিলাম—বেশ, তারপর ? —আমি তাকে বললুম আপনার কথা। আপনি কি করেন, কোথায় বাড়ি ; সব বলবার পরে তাকে বললুম, এর সঙ্গে কিন্তু তোমার ভাই বিয়ের ঠিক করেছি। এমন কথা কখনও শুনি নাই। অবাক হইয়া বলিলাম—কি করে বললেন ? জানা নেই,