পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ማልe বিভূতি-রচনাবলী শৈানা নেই, বললেন অমনি বিয়ের কথা ? বন্ধুপত্নী পাড়াগায়ের সহজ সারল্যের মধ্যে মানুষ হওয়ার দরুণই বোধ হয় এই অদ্ভুত আচরণের অদ্ভুতত্ব একেবারেই ধরিতে পারিলেন না। বলিলেন—কেন বলব না? আমার চেয়ে বয়সে যদিও ছোট, তবুও তার সঙ্গে সমবয়সীর মত ভাব হয়ে গেছল। বললুম, ওঁর একজন বন্ধু আছেন, তিনি মাঝে মাঝে আমাদের এখানে আসেন—আমি তার সঙ্গে তোমার বিয়ের চেষ্টা করছি। এখন তুমি যদি মত দাও ভাই, তবে আমি ওঁর কাছে কথা পাড়ি। —মেয়েটি কি বললে ? মত দিলে ? - —বললে, তিনি এতদিন বিয়ে করেন নি কেন ? আমি বললুম, খেয়ালী লোক তাই । এবার বিয়ে করবার ইচ্ছে হয়েছে, তা ছাড়া তোমার মত মেয়ে পেলে নিশ্চয়ই বিয়ে করবেন। তার পরে মেয়েটি আপনার সম্বন্ধে আরও দু-একটি কথা জিজ্ঞেস করলে। আপনার বয়েস কত, মুখুজ্যে ন চাটুজ্যে—কি পাস । কি পাস, এই কথাটা দুবার করে জিজ্ঞেস করলে—যখন বললুম বি-এ পাস—সে তা তো আবার বোঝে না। বললুম-তিনটে পাস। তখন তার মুখ দেখে মনে হ'ল বেশ খুশীই হয়েছে। সুতরাং ও-পক্ষের মত আছে বোঝা গিয়েছে। এখন আপনি মত ক’রে ফেলুন তো ঠাকুরপো । আমি সব ঠিক করি। বাপের নাম-ঠিকানা আমি জেনে নিইছি। ওঁকে দিয়ে চিঠি লেখাই—কেমন তো ? কোনো মতে সেবারের মত কথাটা চাপা দিয়া তো কলিকাতা ফিরিলাম। তাহার পর বছর-খানেক আমার সেখানে আর যাইবার দরকার হয় নাই । পুনরায় সেখানে গেলাম পরের বৎসর মাঘ মাসে । সন্ধ্যায় বসিয়া গল্প করিতেছি, বন্ধুপত্নী বলিলেন কথায় কথায়—ঠাকুরপো, মনে আছে সেই মণিমালার কথা ? এবারও যে শিবতলার বারোয়ারির দিন তার সঙ্গে দেখা হ’ল। বলিলাম—বেশ কথা । তিনি বলিলেন—তার বিয়ে এখনও হয় নি। গরীব ঘরের মেয়ে, বাপ থেকেও নেই, কে . বিয়ে দিচ্ছে ? ঐ দিদিমা ভরসা। ক-জায়গায় সম্বন্ধ হয়েছিল, টাকার বহর শুনে এরা পিছিয়েছে। তার উপর মেয়েটি অন্য দিকে যদিও খুব সুশ্ৰী, কিন্তু রং তো তেমন ফর্সা নয় । আমি কিন্তু আবার তুলেছিলাম আপনার সঙ্গে বিয়ের কথা । আহ, করুন না ঠাকুরপো, গরীবের মেয়ের দায় উদ্ধার ? এবার সে নিজেই আপনার কথা জিজ্ঞেস করলে । আমি বিস্মিত হইয়া বলিলাম—কি রকম ? বন্ধুপত্নী বলিলেন—আমার সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গিয়েছে কিনা। আমরা যেখানে বসি সেখানটাতে বসে কথা বললে কারও কানে যাবার ভয় নেই। পরে একটু থামিয়া হাসিমুখে একটু মুর নামাইয়া বলিলেন—এ-কথা সে-কথার পরে আপনার কথা তুললাম। তা বললে, বি-এ পাস তো চাকরি না ক'রে ব্যবসা করেন কেন ? আমি বললাম—স্বাধীন ব্যবসা ভালবাসেন, টাকাও বেশ রোজগার করেন। আর একটা কথা বলেছে, শুনলে আপনি হাসবেন । । —কি কথা ? —বললে, আপনি দেখতে কেমন ; কালো না ফর্সা । কৌতুকের মুরে বলিলাম—আপনি কি বললেন ? --বললাম, না কালো, না ফর্সা, মাঝামাঝি । —এঃ, আপনি আমার বিয়ের চান্সটা এভাবে মাটি করে দিলেন ?