পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዓ8 t বিভূতি-রচনাবলী সম্বন্ধ হয়েছে, পাত্রের বাড়ি আছে কলকাতায় হাতীবাগানে, পাত্র মার্চেন্ট অফিসে চাকুরি করে। চকত্তি মশায়ের ইচ্ছে, শ্রাবণ মাসের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে তিনি আপাততঃ নিশ্চিন্ত হন । আমরা বিদায় নিলাম । # ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুদূর এসে বা ধারে একটা পুকুর। গ্রামের একটি ভদ্রলোক আমাদের এগিয়ে দিতে আসছিলেন, তিনি হঠাৎ পুকুরের বাধা ঘাটের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বল্লেন—ঐ যে মেয়েটি দাড়িয়ে আছে, ঐ হোল গোপাল কাকার বড় মেয়ে রাণী—যার কথা হচ্ছিল— কি ক্ষণে না জানি মেয়েটিকে যে দেখলুম! কত ছবি চোখের সামনে দিনরাত আসে যায়, ঢেউয়ের মাথায় ফেনার ফুলের মত তখন বেশ দেখায়, তারপর কোথায় যায় মিলিয়ে তলিয়ে, কোনো চিহ্নও রেখে যায় না। লক্ষ অখ্যাত ছবির মধ্যে একটি কি করে যে মনের মধ্যে সেদিন স্থায়ী দাগ রেখে গেল! চেয়ে দেখি একটি ষোল-সতেরো বছরের মেয়ে পুকুরঘাটে জলের ধারে দাড়িয়ে আছে, বোধ হয় নাইতে এসে তখনও জলে নামে নি, মোটামুটি মুত্ৰ মন নয়, গায়ের রংটিও ফর্স স্বাস্থ্যবতী বটে। বা হাতে একটা সাবানের পাত্র, একখানা রাঙা গামছা দুটি আঙ্গুল দিয়ে ধরে খেলার ছলে জলে ফেলে দিচ্ছে—কিছু না, অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার— অথচ আজও যখন ছবিটা কাজের ফঁাকে হঠাৎ মনে এসে পড়ে— যাক, ওসব কথা পরে বলবেআমাদের মধ্যে একজন বললেন—মেয়েটি তো বেশ দেখতে, এই মেয়েটির সঙ্গে সম্বন্ধ হলে খুব ভাল হোত। যে মেয়েটি দেখা গেল, তার চেয়ে এটি সত্যিই অনেক ভালো। তারপর আমরা গ্রামের বাইরে মাঠে এসে পড়লুম—আমাদের সঙ্গের লোকটিও ফিরে গেলেন । ওদের ব্যাপার আমি এই পর্যন্ত জানি । আমার বন্ধুর ভাইয়ের সেখানে বিয়ে হয় নি একথা আমি পরে অবিস্তি শুনেছিলুম, কেন হয় নি সে খবর রাখবার আবশ্বক বিবেচনা করি নি। তবে শুনেছিলুম নাকি দেনা-পাওনা নিয়ে কি একটা গোলযোগই সম্বন্ধ ভেঙে যাওয়ার কারণ । এর পরে বছরখানেক কেটে গিয়েচে । একদিন সকালে আমার বাসায় জন কয়েক ছোক্রা এসে হাজির হোল। তাদের সকলের বাড়ি ঐ গ্রামে—তাদের মধ্যে আমার আত্মীয়টির এক ভাইও আছে। সকলেই খুব ব্যস্তসমস্ত। আমায় বল্লে—শীগগির নিন তৈরী হয়ে—চলুন আমাদের সঙ্গে যেতে হবে— —কি ব্যাপার ? হয়েচে কি ? সকলেই সমস্বরে বল্পে—পথে বেরিয়ে শুনবেন, এখন বেরিয়ে পড়ন চট্‌ করে—স্মশানে যেতে হবে—কাশীমিত্তিরের ঘাটে— খুব বিন্মিত হোলাম । —কে মারা গিয়েচে ? ব্যাপার কি ? আমার আত্মীরের ছেলেটি লল্লে—গোপাল কাকার মেয়ে রাণীর স্বামী অাজ মারা গিয়েচে । এখানে বিয়ে হয়েছিল হাতীবাগানে—বিয়ের পর তিনমাস এখনও পোরে নি। আর একটি ছেলে বললে—তার চেয়েও বিপদ, রাণীর দেওর আর শাশুড়ীর ব্যবহার ভয়ানক খারাপ, তারা কেউ পাশানে যাবেন!—মুখাগ্নি করতে হবে রাণীকেই—দেওর এখন চেষ্টার অাছে, নগদ টাক,