পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እbሥe বিভূতি-রচনাবলী আসার পরের দিন তো ডাক্তার পরীক্ষা করলে । দেখলে জীবনে আশা বড় কম। নিজের মৃত্যুর জন্তে সে নিজে দায়ী। কারণ সে মৃত্যু ডেকে এনেছে অযথা নিজের নির্বদ্ধিতার ফলে এবং চিকিৎসার অভাবে। এমন কি, এ কথা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে, সে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশেষের পানে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ: নিছক ভাইটামিনের অভাবে বা খাদ্যপ্রাণের অকিঞ্চিৎকরতায় । স্বামীর দীর্ঘ দিনের বেকার অবস্থা রোগের আর একটি কারণ বলা যেতে পারে । যা হোক, বৌমার চিকিৎসা এবার চলতে লাগলো যথাসাধ্য। কিন্তু সে চিকিৎসার কোন সুফল ফললো না মাসখানেকের মধ্যেও । ডাক্তার হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসলো। তবু অলকার রোগ কমলো না ; পরন্তু বৃদ্ধি পেতে লাগলো একটু একটু করে দিন দিন, সকল চেষ্টাকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করে । অলকার মুন খাওয়া নিষেধ। কোন এক রাজার মেয়ে নাকি তার বাপকে মুনের মত ভালবাসতো। সুতরাং কুনের প্রয়োজনীয়তা কিংবা গুণ সামান্ত নয়। তাই অলকা সচরাচর মুনহীন তরকারী থেত না । ডাক্তারের বেী আবার লোককে খাওয়াতে নাকি বড় ভালবাসতো। সুতরাং অলকার খাওয়ার কষ্ট দেখে তার করুণ মন ক্লিষ্ট হোত অত্যন্ত । অনেক বলে ক’য়ে সে স্বামীর কাছ থেকে বৌমার সামান্ত একটু বাটি চচ্চড়ি খাবার অনুমতি পেয়েছিল এবং প্রতিদিন তার জন্যে একটা বাটি-চচ্চড়ি করে দিত সযত্নে । সেদিন অনেকগুলো বিছানা পরিষ্কার করে উঠতেই ডাক্তারের বৌয়ের বেশ বেলা হয়ে গেল। পিসিমা তাড়াতাড়ি স্নান করে এসে রান্না করতে বসলো। আর বৌমা ?—বাতায়নপাশে বসে দূর আকাশের পানে তাকিয়ে দেখতে লাগল অপরূপ মেঘের খেলা। দূরে অতিকায় ধুমের মত দাড়িয়ে আছে আকাশচুম্বী পৰ্ব্বত । তার নীচে ইতস্তত: বৃক্ষলতাশোভিত কালো বর্ণের ছোট ছোট পাহাড় । তাদের গায়ে লাল কাকরের বঙ্কিম পথরেখা—মনে হয় যেন কোন অচিন দেশে চলে গেছে পাহাড়ের বুক ব’য়ে। বৌমা অন্তমনস্ক হয়ে ভাবছিল, এমন সময় ডাক্তারের বেী ভিজে চুল মুছতে মুছতে এসে বললে, “বেীমা, আজ কি দিয়ে দুধ সাবু খাবে "ি —“যা হোক দিয়ে খাব অখন মা।” —“কেন বাটি করতে দিলে না ?” —“থাকগে, কুটনো তো সব কোটা হয়ে গেছে !" —“ত হোক, তুমি একটা বাটি করতে দাও মা " কথা শেষ করে ডাক্তারের বেী গৃহত্যাগ করে আর বৌমা উঠে যায় বাট-চচ্চড়ির কুটনো কুটতে । পিসিমা কড়ার ওপর মাছ দিয়ে একবার বাটির পানে তাকিয়ে নিল, তারপর বললে, "বলি হ্যাগো বৌদি, আমার গতরে কি-এমন পোকা পড়েছে ?” বেীমা সবিস্ময়ে কয়, "কেন ঠাকুরবি ?" মুখরা পিসিমা তখন ফেটে পড়লেন, “আমি কি বাটির কুটনো ফুটতে পারি না, না কুটলে হাতে পক্ষাঘাত হোত । তেজ করে আমায় একবার বলা হোল না। রোগ তো বার মাস লেগেই আছে। তার আবার অত দেমাক্ কিসের ?” - রুগ্ন বধূটর শুষ্ক নয়নদ্বয় বিদীর্ণ করে ঝরে পড়ে অঝোরে মুক্তার মত অশ্রীকণা নিদারুণ স্থ ও বেদনায়, ননদের এই বাক্যবাণের সুতীব্র আঘাতে। স্বামীর অর্থহীনতা এবং নিজের রোগের চিন্তায় তার সারা কোমল অন্তরাত্মা সহসা র রী করে ওঠে। আর পিসিমার মুখে তখন যেন তুবড়ীতে আগুন লেগেছে। সমস্ত বারুদ না নিঃশেষিত হলে সে নীরব হবে না। বৌমা আন্তে আস্তে বাটিটা নিরে আসে সকলের অজ্ঞাতসারে ।