পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե, বিভূতি-রচনাবলী এ ঠিক জিতুর কাজ, নইলে এমন মেলেচ্ছে। এ বাড়ির মধ্যে তো আর কেউ নেই। কি ক'রে ফেলেচি না জানি! ভয়ে ভরে বললাম—কি হয়েচে জ্যাঠাইমা ? জ্যাঠাইম মারমুখী হয়ে বললেন—কি হয়েচে দেখতে পাচ্চে না ? দুকুরবেলা কাপড়খানা কেচে অালনায় রেখে গিইচি, কাচা কাপড়খানা জল ছিটিয়ে এটো ক'রে বসে আছো ? মেজকাকীমার এক পিসিন মাসী এ বাড়িতে থাকে, বুড়ী ভারি ঝগড়াটে আর জ্যাঠাইমার খোশামুদে। বয়স পঞ্চাশ ষাট হবে, কালে, একহারা দড়িপাকানো গড়ন—সীতা আর আমি আড়ালে বলি—তাড়ক রাকুলী। নানা ছুতোনাতার মাকে অনেকবার বকুনি খাইয়েচে জ্যাঠাইম-কাকীমাদের কাছে। ওকে দু-চক্ষে আমরা দেখতে পারিনে। জ্যাঠাইমার গলার স্বর শুনে রান্নাঘরের উঠোন থেকে বুড়ী ছুটে এল –কি হয়েচে বৌম, কি হয়েচে ? জ্যাঠাইমা বললেন—সনোবেল আহ্নিক ক’রবো বলে কাপড়খানা কেচে আলনায় দিয়ে রেখেচি মাসী—আর বুড়ে ধাড়ী ছোড়া করেচে কি, এখেনে মুড়ি খেয়ে সেই বাটিতেই জল দিয়ে হাত ধুয়েচে, আর এই রোয়াকের ধারেই তো কাপড়—তুমি কি বলতে চাও কাপড়ে লাগেনি জলের ছিটে ? বুড়ী অবাক হয়ে ভান ক'রে বললে—ওম! সে কি কথা ! লাগেনি আবার, একশো বার লেগেচে । ” আমি ভাবলাম, বারে । এতে আর হয়েচে কি ? জল যদি লেগেই থাকে, দু-চার ফোট লেগেচে বই তো নয় ? জ্যাঠাইমাকে বললাম—জল তো ওতে লাগেনি জ্যাঠাইমা, আর যদিও একটু লেগে থাকে, এখনও রোদ রয়েচে, এক্ষুনি শুকিয়ে যাবে’খন। বুড়ী বললে—শোন কথা ; ও ছোড়ার জ্ঞান-কাও একেবারেই নেই–একেবারেই মেলেচ্ছে —ওর মাও তাই। হিন্দুয়ানি তো শেখেনি কোনোদিন— —তোমরা শোন মালী, আমি শুনে শুনে হদ হয়ে গিয়েচি। ঘরে ঠাকুর রয়েচেন, আর এই সব অনাচার কি ক'রে বরদাস্ত করি বল তো তুমি ? আমার কোনো ছেলেমেয়ে ওরকম করবে ? অত বড় ধাড়ী ছেলে হ'ল, মুড়ির বাটিতে জল ঢাললে যে সকড়ি হয় সেও জানে না ! শুনবে কোথা থেকে, মেলেচ্ছে থিরিস্টানের মধ্যে এতকাল কাটিয়ে এসেচে, ভালো শিক্ষে দিয়েচে কে ? হিন্ধর বাড়িতে কি এ সব পোষায় ? বল তো তুমি— বুড়ী বললে—ওর মা জানে না তো ও জানবে কোথা থেকে ? সেদিন ওর মা করেচে কি, পুকুরঘাটে তো বড় নৈবিদ্ধির বারকোশখানা ধুতে নিয়ে গিয়েচে—যেদিন ঠাকুর এলেন (বুড়ী দু-হাত জোড় ক’রে নমস্কার করলে ) তার পরের দিন—আমি দাড়িয়ে ঘাটে, কাপড় কেচে যখন উঠলি তখন ধোওয়া বারকোশখান। আর একবার জলে ডুবো-ন ডুবিয়েই অমনি উঠিয়ে নিয়ে যাচ্চে। আমি দেখে বলি, ও কি কাও বউ ? ভাগ্যিস দেখে ফেললাম তাই তো— মায়ের দোষ দেওয়াতেই হোক, বা আমাকে আগের ওই-সব কথা বলাতেই হোক, আমার রাগ হ'ল। তা ছাড়া আমার মন বললে এতে কোন দোষ হয়নি—মুড়ির বাটিতে জল ঢালার দরুনে মুড়ির বাটি অপবিত্র হবে কেন ? মা বারকোশ ধুয়ে জলের ধারে রেখে স্বান সেরে উঠে যদি সে বারকোশ নিয়ে এসে থাকেন, তাতে মা কোন অন্যায় কাজ করেননি। বললাম—ওতে দোষ কি জ্যাঠাইম, মুড়িও খাবার জিনিস, জলও খাবার জিনিস—দুটোতে মেশালে খারাপ হবে কেন, ছুতে থাকবেই বা মা কেন ? জ্যাঠাইম অগ্নিমূৰ্ত্তি হয়ে উঠলেন—তোর কাছে শাস্তর শুনতে আসিনি, ফাজিল ছোড়া কোথাকার—তোরা তো থিরিস্টান, হিন্ধর আচারব্যাভার তোরা জানিস কি, তোর মী-ই বা