পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্নর দল సిసి) হ’ল একটার পর একটা বলছি মন দিয়ে শোন । কস্তুরীর গন্ধটা যখন সেকেও চার-পাচ পেয়েছি তখন আমার সেদিকে মন গেল। ভাবলুম এ দেখছি অবিকল কস্তুরীর গন্ধ ! বা, পাহাড়ে জঙ্গলে কত সুন্দর অজানা বনফুলই আছে! তারপরেই আমার মনে হ’ল আমার পেছনে অর্থাৎ যে-গাছটার তলায় বসে ছিলাম তার গুড়ির আড়ালে কে একজন এসে দাড়িয়েছে। আমি পেছন থেকে দেখতে পাচ্ছি নে বটে কিন্তু অনেক সময় লোকের উপস্থিতি চোখে না-দেখেও এভাবে ধরা যায়। আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন যেন অতিমাত্রায় সজাগ ও সতর্ক হয়ে উঠেছে। বাতাস যেন বন্ধ হয়ে গেল, সমস্ত শরীর দিয়ে যেন গরম আগুনের হলকা বেরুচ্ছে মনে হ’ল ! আবার অজ্ঞান হয়ে যাবো নাকি ? ভয় হ'ল মনে । ঠিক সেই সময় আমার সামনে দেখলাম একটি মেয়ে দাড়িয়ে। আধ সেকেণ্ড আগেও তিনি সেখানে ছিলেন না । ঠিক সেই পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসার রাত্রের সেই অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি। কিন্তু এবার মনে মনে দৃঢ়সঙ্কল্প করলাম জ্ঞান হারাব না কখনই। মেয়েটি দেথি ঈষৎ ভ্ৰকুটির সঙ্গে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে। জিজ্ঞাসা করিলাম—নিজের চোখে এমনি এক মূৰ্ত্তি দেখলেন আপনি ? ' আমার কথার মধ্যে হয়তো একটু অবিশ্বাসের গন্ধ পাইয়া তারানাথ উগ্র প্রতিবাদের সুরে বলিল—নিজের চোখে । সুস্থ শরীরে । বিশ্বাস কর আর না-কর সে আলাদা কথা— কিন্তু যা দেখেছি তাকে মিথ্যে বলতে পারব না । —কি রকম দেখলেন ? কেমন চেহারা ? —ভারী রূপসী যদি বলি কিছুই বলা হোল না। মধুমুন্দরী দেবীর ধ্যানে আছে : উদ্যদ ভানু প্রতীকাশী বিদ্যুৎপুঞ্জনিভা সতী নীলাম্বরপরিধান মদবিহবললোচনা নানালঙ্কারশোভাঢ়া কস্তুরীগন্ধমোদিত কোমলাঙ্গীং স্মেরমুখীং পীনোত্তঙ্গপয়োধরাম্। অবিকল সেই মূৰ্ত্তি। তখন বুঝলাম দেবদেবীর ধ্যান মনগড়া কথা নয়, সাধকে প্রত্যক্ষ না করলে এমন বর্ণনা দেওয়া যায় না । —আপনি কোন কথা বললেন ? —কথা ! আমার চেতনা তখন লোপ পাবার মত হয়েছে—তো কথা বলছি । পাগল তুমি ? সে-তেজ সহ করা আমার কৰ্ম্ম ? সাধারণ মানবীর মত তার কোন জায়গাই নয়। ঐ যে বলেচে মদবিহ্বললোচনা—ওরে বাবা সে চোখের কি ভাব ! ত্রিভুবন জর হয় সে চোখের চাউনিতে ••• আমি অধীর হইয়া বলিলাম—বর্ণনা রাখুন। কি কথা হ’ল বলুন। —কথাবার্তা যা হয়েছিল সব বলার দরকার নেই। মোটের উপর সেই থেকে মধুমুন্দরী দেবী প্রতি রাত্রে আমার দেখা দিতেন। নদীতীরের সেই নির্জন জায়গায় তাকে চেয়েছিলাম প্রিয়ারূপে—বলাই বাহুল্য, সাধুর কথা কে শোনে ? তখন শীতকাল, বরাকর নদীর জল কম হয়েছে অনেক, জলের ধারে জলজ লিলিগাছ শুকিয়ে হলদে হয়ে এসেছে, আগে যেখানে জল ছিল, সেখানে বালির উপর অত্রকণা জ্যোৎস্নারাত্রে চকচক করে, বরাকর নদীর দুপারের শালবন পাতা ঝরিয়ে দিচ্ছে। আকাশ রোজ নীল, রাত্রে শুক্লপক্ষের জ্যোৎজার বড় মনোরম শোভা-সেই সময় থেকে তিনটি মাস দেবী প্রতি রাত্রে দেখা