পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किम्लन्न प्रांठा . ২১৩ আমি বুঝলুম যে তার শ্রমের পারিশ্রমিকটা এমন করে অপচয় করা তার শরীরের বিন্দু বিন্দু রক্ত গ্রহণ করার সামিল। আমি তীব্র প্রতিবাদ করলুম, ন, এ কখনই হবে না। আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দেখে তার মুখের চির প্রফুল্ল হাসি অকস্মাৎ যেন মিলিয়ে গেল। তিনি মুখ চুন করে বললেন, এ কি বলছে পিণ্ট । আর সাহস হোল না কিছু বলতে । যাই হোক, বাড়ি ফেরার পথে সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞ করলুম যে মাস্টার মশাই যাতে আমাদের জন্তে র্তার মাইনে থেকে কিছু খরচ না করেন তার ব্যবস্থা করতে হবে । হাজার হোক বেচারা ঐ ক’টি টাকা সম্বল ক’রে কলকাতায় বাস করছেন। কিন্তু আমার প্রতিজ্ঞ মত কাজ করবার আগেই একটা বিশ্ৰী ঘটনা ঘটে গেল । মেজকাক একদিন আমার ট্র্যানমেশনের খাতাখানা দেখতে দেখতে মাস্টার মশাইকে বললেন, এ সব কি পড়াচ্ছেন মাস্টার মশাই ! ইংরিজি আপনি দেখছি কিছুই জানেন না। I live in a boarding সেনটেন্সটার মধ্যে 'in' কি এমন অপরাধ করেছে যে ওকে তুলে আপনি 'at' বসিয়ে দিলেন! আসলে ওর ভুল কোথায় তা তো দেখতে পেলেন না। আর Every bush and every tree was in bud সেনটেনস্টার 'was' cott, “were’ on কোন Grammar অনুযায়ী ? আপনি ফোর্থ ক্লাসের ছেলে পড়াবেন কেমন করে ? মাস্টার লজ্জায় মুখ নীচু করে রইলেন। আর আমি ? আমি ভাবতে লাগলুম ভাবী বিপদের কথা । মেজকাকা বললেন, তাই বলি ছেলেরা এত খারাপ হয়ে যাচ্ছে কেন। পিণ্ট, তোর হাফ, ইয়াবৃলির প্রোগ্রেস রিপোর্টটা নিয়ে আয় তো । আমি ভয়ে ভয়ে আমার প্রোগ্রেস রিপোর্ট নিয়ে এলুম। মেজকাকা বললেন, দেখুন কি বিশ্ৰী রেজাল্ট ! ইংরেজিতে তো ফেল । আর সবে রগ ঘোষিয়ে পাস করেছে। এর পর আর আপনাকে রাখতে আমি সাহস করি না। তা হলে ওদের পারে কুড়ুল মারা হয়। আমরা অন্ত মাস্টার দেখবো। আপনার বাকী মাইনেট দু' তারিখে নিয়ে যাবেন। মেজকাকার কথায় মাস্টার মশাই একটি প্রতিবাদ পর্য্যন্ত করলেন না, নীরবে নিঃশবা পদক্ষেপে প্রস্থান করলেন । আমি তার মুখের দিকে তাকাতে পারলুম না। এর জন্তে দোষী তো আমি। আমি তো মাস্টার মশায়ের ভুলগুলো মেজকাকাকে বলে বলে তার মন একেবারে চটিয়ে রেখেছিলুম। আমি অপরাধীর মত বসে রইলুম মুখ নীচু করে। উন্নতি গোকুলদের অবস্থা যে কত শোচনীয়,—তা গ্রামের কেউ জানত না। বুদ্ধিমতী গোকুলের মা নিজেদের দারিদ্র্য লোকচক্ষু থেকে যথাসাধ্য লুকিয়ে রাখবার চেষ্টা করতো। কিন্তু এবার শীতকালের দিকে অবস্থা এমনি দাড়ালো যে আর কোন রকমে ঢেকে রাখা চলে না । গোকুলের মা একদিন সন্ধ্যাবেলা ছেলেকে বল্পে, সত্যি গোকুল, তুই বলে বসে আর কতদিন সংসারটি মাটি করবি ? একটা কিছু স্বাখ একবার। গোকুল পৈতৃক কোঠাবাড়ির ভাঙা রোরাকের একপাশে বসে সান্ধ্য চাপানে নিযুক্ত। অর্থাৎ, চটা-ওটা একটা কলাই-করা বাটিতে সে একপ্রকার ফিকে কটা রংয়ের বিস্বাদ তরল পদার্থ সেবন করছিল—তাতে দুধের ছিটেফোট থাকলেও চিনির বালাই ছিল না । পুরোনো