পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किन्नग्न झल *)(t খোলার ঘর নিলে । মাসে মাত্র তিনটি টাকা ভাড়া । গোকুলের মা এখানে এসে অকুল সমুদ্রে পড়ে গিয়েছে—একমাত্র ভরসা বন্ধু পরামাণিক, যে কলকাতার রাস্তাঘাট চেনে—সে যদি কিছু কিনারা করতে পারে এর । প্রতিদিন দুপুরে আর সন্ধ্যাবেল নিকটেই কোথা থেকে শাখ, ঘণ্টা, কাসরের আওয়াজ আসে। একদিন গোকুলের মা জিজ্ঞেস করলে—ইল বন্ধু, এখানে কি কোথাও ঠাকুরবাড়ি আছে নাকি ? বন্ধু বল্লে,—হঁ্য, ম-ঠাকরুণ, পাশেই মিত্তিরবাড়ি, ওরা মস্ত বড়লোক । ওদেরই তো ঠাকুরবাড়ি রয়েছে বাড়িতেই। এই রাসের সময় খুব ধুমধাম হবে—আপনি যাবেন না দেখতে ? সবাই যাবে। খুব ভাল বন্দোবস্ত । রাসের দিন পাড়ার আরও পাচজন মেয়ের সঙ্গে গোকুলের মা মিত্তিরবাড়ি ঠাকুর দেখতে গেল। প্রকাগু শ্বেতপাথরের বাধানে মেঝের উপর ঝকৃঝকে রুপোর বাসনে ভোগ, রুপোর ঘণ্টা, কড়িকাঠ থেকে বড় বড় কাচের পরকলাওয়াল ঝাড়ে ইলেকটিক আলো জলচে, ধূপ-ধুনোর গন্ধ বেরিয়ে ঘর আমোদ করেচে, আর নানা রকম ফুলের কি চমৎকার গন্ধ । গোকুলের মা এমন ঠাকুরবাড়ি, এমন জাকজমক কখনো দেখে নি জীবনে, বাড়ির কত্রীঠাকরুণ ঠাকুরের এক পাশে বসেছিলেন, লোকে চিনিয়ে দিলে । আশী বছর হয়েচে, এখনও কি ধপধপে গায়ের রং । আরতি ও কীৰ্ত্তনাদি শেষ হয়ে যাওয়ার পয়ে প্রসাদ বিতরণ ও ব্রাহ্মণভোজন। গোকুলের মা বড় থালায় এক থালা খাবার নিয়ে বাড়ি এল। মা ও ছেলে দুজনেই খুব খুশী, এসব খাবার ফলমূল কখনো পাড়াগায়ে ওরা চোখেও দেখেনি। * গোকুলের মা আরও দু’চারদিন ঠাকুরবাড়ি সন্ধ্যাবেলা কীৰ্ত্তন শুনতে গেল । একদিন গিল্পীমা ওকে লক্ষ্য করলেন। নূতন মুখ, একে তো আগে কখনো দেখেন নি ঠাকুরবাড়িতে । কাছে ডেকে বল্লেন—তোমার বাড়ি কোথায় গা ? এসে তোমার সঙ্গে আলাপ করি । গোকুলের মা সন্ত্রমে, সঙ্কোচে একেবারে জড়সড় হয়ে গেল। মুখ দিয়ে ভাল কথা বেরোয় না, এত বড় বাড়ির কত্রী নিজে যেচে তার সঙ্গে আলাপ করতে চাইচেন। ও সব পরিচয় দিলে । দেশে দুঃখকষ্টে পড়ে এখানে এসেচে, কাছেই খোলার বাড়িতে থাকে। ছেলেটি চাকরি-বাকরির চেষ্টা করচে । কেই বা চাকরি দেবে, এখানে ও কাউকেই চেনে না ! গিল্পীম। ওর সঙ্গে অনেক কথাবার্তা কইলেন, লোকটি বড় ভালো । বল্পেন—আমাদের ঠাকুরবাড়িতে রাত্তিরের ভোগ ব্রাহ্মণ-বাড়ি দেওয়ার নিয়ম আছে। তুমি বাছা রোজ এসে আরতির পরে ভোগ নিয়ে যেও, আমার বলা রইল। কত রবাহুত, অনাহুত লোক এসে খেয়ে যায়। তুমি আর তোমার ছেলে খেলে আমি খুশী হবে। সেদিন থেকে গোকুলের মায়ের কপালে যা ঘটতে লাগলো—সে স্বপ্নেও তেমন সৌভাগ্য কখনো কল্পনা করে নি। - মস্ত বড় এক থালাভত্তি লুচি, তরকারি, মিষ্টি, ফলমূল গোকুলের মায়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়াই কষ্ট। কে কত খায় ? বন্ধু নাপিত পৰ্য্যন্ত লুচি খেয়ে আর পারে না। রোজ রাত্রে লুচি। রোজ রাত্রে একরাশ ফলমূল, বাদাম পেস্তা ছানা মিষ্টি। বড়লোকের প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের নৈশভোগের যা কিছু উপকরণ সকল ওদের বাড়িতে। মাঘ মাসের দিকে ঠাকুরবাড়ির পুরাতন টহলদার মারা গেল। গিীমা গোকুলের মাকে সে কাজে নিযুক্ত করলেন। মাইনে পাবে সাত টাকা, দু'বেল ভোগের প্রসাদ পাবে। সকালের