পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՖԵ' বিভূতি-রচনাবলী ওদের বাড়ি থেকে ৷ তক্তাপোশট থেকে একরাশ চামচিকের নাদি সরিয়ে সেখানে সুটকেসটা রাখলে নামিয়ে । একটু পরে তিনকড়ি মুখুয্যের ছেলে প্রমোদ তাকে ডাকতে এলো। প্রমোদের বাড়ি যেতে গোকুলের যথেষ্ট সঙ্কোচ বোধ হচ্ছিল। এরই বোন বীণার সঙ্গে গোকুলের একবার বিয়ের প্রস্তাব হয়েছিল বছর তিনেক আগে, যে বছর ওরা কলকাতায় যায়, সে বছর । গোকুল বলেছিল চাকরি না পেয়ে সে বিয়ে করবে না । বীণার বয়েস এখন হয়েচে ষোল-সতেরো। এথনো তার বিয়ে হয়নি, একথা গোকুল জানে। বীণাকে ছেলেবেলায় সে সঙ্গে করে নিয়ে কত বেড়িয়েচে, কুল পেড়ে দিয়েচে, কত শাসন করেচে, পাঠশালার পড়া বলে দিয়েচে । বাড়ি থেকে যাবার আগে বীণা প্রায়ই ওদের বাড়িতে আসতে যেতো, ওর সঙ্গে গল্প করতো—কেবল বিয়ের প্রস্তাবের পরে তাকে আর বেশী দেখা যেতে না । এতদিন পরে দেশে এসে বীণাদের বাড়ি যাওয়া একটা কৰ্ত্তব্য বটে, বীণার সঙ্গে দেখা করাও উচিত। কিন্তু যদি বীণার মা পুরোনো প্রস্তাবটি আবার পাড়েন। এখন তো চাকরি করচে, এখন কোন ওজর থাকবার কথা তো নয় । অথচ বীণাকে বিয়ে করবারও ইচ্ছা নেই। পাড়াগায়ের মেয়ে না জানে লেখাপড়, না জানে গান, না জানে ভালো করে কথা কইতে । অবস্থাও খারাপ ওর বাপের— রমাকে দেখবার পরে ওর মনে হয়েচে, এমন ধরনের মেয়েকে জীবন-সঙ্গিনীরূপে লাভ করা একটা সৌভাগ্য। দেখবার মত মেয়ে ; তার মায়েরও আন্তরিক ইচ্ছা তার বিয়ে হয় রমার সঙ্গে । প্রমোদের মা যখন পরদিন সকালে কথাটা পাড়লেন, গোকুল তখন মায়ের কথাটাই বড় করে বললে । তার কোন হাত নেই । আচ্ছা, কলকাতায় গিয়ে মাকে জানাবে, পরে কি হয় পত্র লিখবে । বীণা বোধ হয় তখন জানালা ধরে নিঃশব্দে এসে দাড়িয়েছিল—ওর কথা শেষ হতেই চলে গেল—কেউ টের পায়নি, কথন যে এসেছিল পাশের ঘরে—কিন্তু গোকুলের চোখ এড়ালো না । তারপর যখন ওদের বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে, তখন বীণার সঙ্গে আবার দেখা হোল বাড়ির বাইরে গোয়ালের দরজায়। গরুর দড়ি হাতে বীণা ওদের ছোট্ট বাছুরটা পেয়ারা গাছের গুড়িতে বাধচে । পরনে আধময়লা শাড়ি, গাছাকতক কাচের চুড়ি হাতে, খামবৰ্ণ মেয়ে, দেখতে এমন কিছু নয় ; ওকে দেখে বীণা লজ্জায় চোখ তুলে যেন ভাল করে চাইতে পারলে না ; কারণ তার আগেই বীণা শুনেচে মায়ের মুখে বিয়ের প্রস্তাবট । গোকুল দেখলে যখন দেখা হয়ে পড়লো তখন একটা কথাও না বলাটা ভাল দেখাবে না। বললে—বীণা, ভাল আছিল ? ওঃ, বেশ লম্বা হয়ে পড়েচিস যে | বীণা সলজ্জ মুখে বললে—ভাল আছি—তুমি ভাল আছ গোকুলদা ? —হ্যা, মন্দ নয় । —জ্যাঠাইমার শরীর ভাল আছে ? —মায়ের শরীর মন্দ না, তবে সেই বাতের ব্যথা মাঝে মাঝে— বীণা আর কিছু না বলে গোয়ালের মধ্যে ঢুকে গেল । বিকেলের ট্রেনে গোকুল কলকাতার রওনা হোল। চমৎকার ছায়াচ্ছন্ন বিকালট, গাড়ির জানালার ধারে বসে বাইরের দিকে চেয়ে কেবলই বীণার কথা ওর মনে আসচে দেখে ও আশ্চৰ্য্য হোল। আজ সকালে বীণার সেই দীনমূৰ্ত্তি—পরণে আধময়লা শাড়ি, হাতে গাছাকতক কাচের