পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किन्नद्र भव्नं २२७ --বেশ একটু ঠ্যাকারে । পাড়াগায়ের মাটিতে যেন গুমরে পা পড়ছে না, এমনি ভাব। বামুনের ঘরে বিয়ে হয়ে ভাবছে যেন কি— —তাতে হবেই, বদি বামুনের মেয়ে, বামুনের ঘরে এয়েছে, ওর সাতপুরুষের সৌভাগ্যি না 7 নববধূর স্বপক্ষে বল্পে কেবল শান্তি ও কমলা। শান্তি বীজের সঙ্গে বললে—তোমরা কারো ভালো দেখতে পার না বাপু ! কেন ওসব বলবে একজন ভদ্র ঘরের মেয়ের সম্বন্ধে ? কাল বিকেলে আমি গিয়ে কতক্ষণ ছিলাম নতুন বৌয়ের কাছে। কোন ঠ্যাকার নেই, অংখার নেই, চমৎকার মেয়ে ! কমলা বল্লে—আমাদের উঠতে দেয় না কিছুতেই—কত গল্প করলে, খাবার খেতে দিলে, চী করলে—আর, খুব সাজগোজ কি করে ? সাদাসিদে শাড়ি সেমিজ পরে তো ছিল। তবে খুব ফর্সা কাপড়চোপড়—ময়লা একেবারে দু'চোথে দেখতে পারে না— শান্তি বল্লে—ঘরগুলো এরই মধ্যে কি চমৎকার সাজিয়েছে! আয়না, পিক্চার, দোপাটি ফুলের তোড়া বেঁধে ফুলদানিতে রেখে দিয়েছে—শ্ৰীপতিদা’র বাপের জন্মে কখনো অমন সাজানো ঘরদোরে বাস করেনি—ভারী ফিট্‌ফাট গোছালো বৌটি– ' দিন দুই পরে ডোবার ঘাটে নববধূকে একরাশ বাসন নিয়ে নামতে দেখে সকলে অবাক হয়ে গেল। চারিদিকে বনে ঘেরা ঝুপসি আধ-অন্ধকার ডোবাটা যেন মেয়েটির স্নিগ্ধ রূপের প্রভায় এক মুহূৰ্ত্তে আলো হয়ে উঠল, একথা যারা তখন ডোবার অন্যান্ত ঘাটে ছিল, সবাই মনে মনে স্বীকার করলে। দৃশুটাও যেন অভিনব ঠেকৃলো সকলের কাছে, এমন একটা পচা এদো জঙ্গলে ভরা পাড়াগেয়ে ডোবার ঘাটে সাধারণতঃ কালোকোলে, আধ-ময়লা শাড়িপরা শ্ৰীহীনা ঝি-বেী বা ত্রিকালোত্তীর্ণ প্রৌঢ়া বিধবাদের গামছা-পরিহিত মূৰ্ত্তিই দেখা যায়, বা দেখার আশা করা যায়—সেখানে এমন একটি আধুনিক ছাদের খোপা বাধা, ফর্সা শাড়িব্লাউজ-পর, রূপকথার রাজকুমারীর মত রূপসী, নবযৌবন বধূ সজনেতলার ঘাটে বসে ছাই দিয়ে নিটোল মুগৌর হাতে বাসন মাজছে, এ দৃশুটা খাপ খায় না। সকলের কাছেই এটা খাপছাড়া বলে মনে হ’ল। প্রৌঢ়ারাও ভেবে দেখলেন গত বিশ-ত্রিশ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেনি এই ক্ষুদ্র ডোবার ইতিহাসে । রায়পাড়ার একটি প্রৌঢ় বল্লেন— আহ, বোঁ তো নয়, যেন পিরতিমে—কিন্তু অত রূপ নিয়ে কি এই ডোবায় নামে বাসন মাজতে ! ন-ও-হাতে কখনো ছাই দিয়ে বাসন মাজ অভ্যেস আছে! হাত দেখেই বুঝেছি। তারপর থেকে দেখা গেল ঘরসংসারের যা কিছু কাজ শ্ৰীপতির বেী সব নিজের হাতে করচে। ইতিমধ্যে শ্ৰীপতির কলকাতায় বদলি হবার খবর আসতে সে চলে গেল বাড়ি থেকে। পাড়ার মেয়েদের মধ্যে শাস্তি ও কমলা শ্ৰীপতির বৌয়ের বড় হাওটা হয়ে পড়লো। সকাল নেই বিকেল নেই, সব সময়েই দেখা যায় শান্তি ও কমলা বসে আছে ওখানে । পাড়াগায়ের গরীব ঘরের মেয়ে, অমন আদর করে কেউ কখনো রোজ রোজ ওদের লুচি হালুয়া খেতে দেয়নি। একদিন কমলা বলে—বৌদিদি, তোমার ঘরে কাপড়-মোড়া ওটা কি ? লীপতির বেী বল্লে—ওটা এসরাজ— —বাজাতে জানো বৌদি ? —একটুখানি অমনি জানি ভাই, কিন্তু এ্যাদিন ওকে বার পর্যন্ত করিনি কেন জানে,