পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किन्नन्न झल ২২৯ শ্ৰীপতি বাড়ি নেই, সে সত্রাজিৎপুরের বাড়য্যে-বাড়ির নিমন্ত্রণে গিয়েছে, আজ রাত্রের যাত্র দেখে সকালে ফিরবে। সেইজন্তে সকলে বল্পে, তা ভাল, কিন্তু বৌমা তোমাকে গান গাইতে হবে! শাস্তি বলে—বোঁদি, অম্বুরাধার সেই গানটা গাও অার একবার, আহ, চোখে জল রাখা যায় না শুনলে । - শ্ৰীপতির বেী গাইলে, রমা এসরাজ বাজালে । তারপর রমা ও তারা একসঙ্গে গাইলে । একটিমাত্র তেড়ে-পাখী বঁাশ গাছের মগডালে কোথায় ডাক্‌ আরম্ভ করেছে। রাত ফরস হ’ল । সে মহাষ্টমীর রাত্রি থেকে গ্রামের সবাই জানলে শ্ৰীপতির বৌ কি ধরনের মেয়ে । কেবল তারা জানলে না যে শ্ৰীপতির বেী প্রতিভাশালিনী গায়িক, সত্যিকার আর্টিস্ট । সে ভালবেসে শ্ৰীপতিকে বিয়ে করে এই পাডাগায়ের বনবাস মাথায় করে নিয়ে, নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছেডেচে, যশের আশা, অর্থের আশা, আর্টের চর্চ পর্যন্ত ত্যাগ করেছে। তবু গানের ঝোঁক ওকে ছাড়ে না—ভূতে পাওয়ার মত পেয়ে বসে—দিনরাত তাই ওর মুখে গান লেগেই আছে, তাই আজ মহাষ্টমীর দিন সেই নেশার টানেই এই অভিনয়ের আয়োজন করেচে। শান্তি কিছুতেই ছাডতে চায় না ওকে। বলে, তুমি কোথাও যেও না বৌদিদি, আমি মরে যাবো, এখানে তিষ্ঠুতে পারবো না । শান্তি আজকাল শ্ৰীপতির বৌয়ের কাছে গান শেখে, গলা মন্দ নয় এবং এদিকে খানিকটা গুণ থাকায় সে এরই মধ্যে বেশ শিখে ফেলেচে। কিছু কিছু বাজাতেও শিখেচে । গান-বাজনায় আজকাল তার ভারী উৎসাহ । শ্ৰীপতির বেী তো গান-বাজনা যদি পেয়েছে, আর বড় একটা কিছু চায় না, শাস্তিত সঙ্গীর শিক্ষা নিয়েই সে সব সময় মহাব্যস্ত । অগ্রহায়ণ মাসের দিকে বৌয়ের বাড়ি থেকে চিঠি এল রমা কি হয়ে হঠাৎ মারা গিয়েচে । শ্ৰীপতি কলকাতা থেকে সংবাদটা নিয়ে এল। শ্ৰীপতির বোঁ খুব কান্নাকাটি করলে। পাড়াসুদ্ধ সবাই চোখের জল ফেললে ওকে সাস্তুনা দিতে এসে । শান্তি সব সময় বৌদির কাছে কাছে থাকে আজকাল । তাকে একদিন শ্ৰীপতির বে বল্লে —জানিস শান্তি, আমাদের কিন্নরের দল ভাঙতে শুরু করেছে, রমাকে দিয়ে আরম্ভ হয়েছে, অামার মন যেন বলছে • • • শাস্তির বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলে, ধমক দিয়ে বল্লে, থাক ওসব, কি যে বল বৌদি ! কিন্তু শ্ৰীপতির বৌয়ের কথাই খাটলো । - সে ঠিকই বলেছিল, শান্তি ঠাকুরবি, কিন্নরের দলে ভাঙন ধরেছে। রমার পরে ফাঙ্কন মাসের দিকে গেল পিণ্ট, বসন্ত রোগে । তার আগেই শ্ৰীপতির বে। মাঘ মাসে বাপের বাড়ি গিয়েছিল, শ্রাবণ মাসের প্রথমে প্রসব করতে গিয়ে সেও গেল । এ সংবাদ গ্রামে যখন এল, শান্তি তখন সেখানে ছিল না, সেই বোশেখ মাসে তার বিবাহ হওয়াতে সে তখন ছিল মেটিরি বাণপুর, ওর শ্বশুরবাড়িতে। গ্রামের অন্ত সবাই শুনলে, অনাত্মীয়ের মৃত্যুতে খাটি অকৃত্রিম শোক এ রকম এর আগে কখনো এ গায়ে করতে দেখা যায় নি। রায় গিৰী, চকত্তি গিল্পী, শান্তির মা, মন্টর মা কেঁদে ভাসিয়ে দিলেন। ঐ মেয়েটি কোথা থেকে দু’দিনের জন্তে এসে তার গানের সুরের প্রভাবে সকলের অকরুণ, কুটিল ভাবে পরিবর্তন এনে দিয়েছিল, সে পরিবর্তন যে কতখানি, ওই সময়ে গায়ের মেয়েদের দেখলে বোঝা যেতো । ওদের চক্কত্তি-বাড়ির দুপুর বেলার আড্ডায়, স্নানের ঘাটে শ্ৰীপতির বৌয়ের কথা ছাড়া অন্ত কথা ছিল না।