পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

え○? বিভূতি-রচনাবলী চক্কত্তি-গিল্পী শোক পেয়েছিলেন সকলের চেয়ে বেশী। শ্রপতির বৌয়ের কথা উঠলেই তিনি চোখের জল সামলাতে পারতেন না । বলতেন, দু'দিনের জন্তে এসে মা আমার কি মায়াই দেখিয়ে গেল ! আমার পেটের মেয়ে অমন ককৃথনো করেনি.আহা! আমার পোড়া কপাল, সে কখনো এ কপালে টেকে ! মন্টর মা বলতেন, সে কি আর মানুষ ! দেবী অংশে ওসব মেয়ে জন্মায়। নিজের মুখেই বলতো হেসে হেসে, “আমরা কিন্নরের দল খুড়ীমা’, শাপভ্রষ্ট কিন্নরক্ট তো ছিল - যেমন রূপ, তেমনি স্বভাব, তেমনি গান - ওকি আর মানুষ, মা ! কথা বলতে বলতে মন্টর মার চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল পড়তো । এসবের মধ্যে কেবল কথা বলতে না শান্তি । তার বিবাহিত জীবন খুব সুখের হয় নি, ভেবেছিল বাপের বাড়ি এসে বৌদিদির সঙ্গে অনেকখানি জালা জুড়োবে। পূজোর পরে কাৰ্ত্তিক মাসের প্রথমে বাপের বাড়ি এসে সে সব শুনেছিল । বৌদিদি যে তার জীবন থেকে কতখানি হরণ করে নিয়ে গিয়েছে, তা এরা কেউ জানে না। মুপে সে-সব পাচজনের সামনে ভ্যাজ, ভ্যাজ, করে বলে লাভ কি ? কি বুঝবে লোকে ? বছর দুই পরে একদিনের কথা। গায়ের মধ্যে শ্ৰীপতির বৌয়ের কথা অনেকট চাপা পড়ে গিয়েছে । শ্ৰীপতিও অনেকদিন পরে আবার গ্রামের বাডিতে যাওয়া আসা করছে শনিবারে কিংবা ছুটিছাটাতে । - শ্ৰীপতিদের বাডি থেকে শান্তিদের বাড়ি বেশী দূর নয়, দুখানা বাড়ির পরেই। শান্তি তথন এখানেই ছিল। অনেক রাত্রে সে শুনলে শ্রপতিদাদাদের বাড়িতে কে গান গইচে । ঘুমের মধ্যে গানের সুর কানে যেতেই সে ধড়মড় করে বিছানার ওপর উঠে বসলো— বিরংিনী মীর জাগে তব অনুরাগ, গিরিধর নগর এ কার গলা? ওর গা শিউরে উঠলো। ঘুমের ঘোর এক মুহূৰ্ত্তে ছুটে গেল। কখনো সে ভূলবে এ জীবনে এ গান, এ গলা ? সেই প্রথম পরিচয়ের দিনে ওদের রোয়াকে জ্যোৎস্নারাত্রে বসে এই গানখানাই বৌদিদি প্রথম গেয়েছিল ! সেই অপূৰ্ব্ব করুণ মুর, গানের মুরের প্রতি মোচড়ে যেন একটি বিষন্ন আকাঙ্ক্ষার প্রাণঢাল আত্মনিবেদন ! এ কি আর কাবো গলার— ওর কুমারী জীবনের আনন্দভরা দিনগুলির কত অবসর প্রহর যে এ কষ্ঠের মুরে মধুময় ! ও পাগলের মত ছুটে ঘরের বাইরে এসে দাড়ালো । রাত অনেক । কৃষ্ণাতৃতীয়ার চাদ মাথার ওপর পৌছেচে। ফুটফুটে শরতের জ্যোৎস্নায় বাশবনের তলা পৰ্য্যন্ত আলো হয়ে উঠেছে । ঠিক যেন তিন বছর আগেকার সেই মহাষ্টমীর রাত্রির মত । শাস্তির মা ইতিমধ্যে জেগে উঠে বল্লেন, ও কে গান করছে রে শাস্তি ? তারপর তিনিও তাড়াতাড়ি বাইরে এলেন । শ্ৰীপতিদের বাড়ি তো কেউ থাকে না, গান গাইবে কে ? ওদিকে মন্টর মা মণি, বাদল সবাই জেগেছে দেখা গেল । প্রথমটা এরা সবাই ভয়ে বিস্ময়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। পরে ব্যাপারটা বোঝা গেল । শ্ৰীপতি কখন রাতের ট্রেনে বাড়ি এসেছিল, কেউ লক্ষ্য করেনি। সে কলের গান বাজাচ্ছে । ওদের সাড়া পেয়ে সে বাইরে এসে বল্লে—আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে আজ চেয়ে আনলুম ওর গানখানা । মরবার ক’মাস আগে রেকর্ডে গেয়েছিল ।