পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ২৩৭ মুললিতা কাছে এসে দাড়ালো । ননীর প্রায় সমবয়সী তার এই সংমেয়েটি, বরং কিছু বড়। সীমাই ননীর সমবয়সী। সুললিতার পরনে দামী ভয়েলের শাড়ি, হাতে পুতির মালা দিয়ে তৈরি ভ্যানিটি ব্যাগ । ননীবালা বল্লে—এসে মা, সাবধানে থেকে । চিঠিপত্তর দিও। ননীবালা পাড়াগায়ের লাজুক মেয়ে, নিজের কথা কিছু বলতে জানে না। সুললিতা বলেছিল একদিন তার স্বামীকে—ওর অভাব কি, বাবা সৰ্ব্বস্ব ওর পেটে ঢুকিয়ে রেখে গিয়েছেন । ননীবালার পেটরাতে নগদ বাইশ টাকা আছে। ঐ তার শেষ সম্বল । ভগবান জানেন । ননীবালার গহনাগুলো সৎমেয়ে দুটি চেয়ে নিয়েছিল বিয়ের সময় । বিশেষ করে সুললিতা। ওগুলো নাকি তার নিজের মায়ের গায়ের আদরের গয়না । ন্যায্যমত নাকি ওরই প্রাপ্য । মুললিতা বেশী কিছু না বলেই বিদায় নিলে । জামাই এসে প্রণাম করলে । এই লোকটিই প্রথম তার সঙ্গে কথা বল্পে যাবার সময় । —ম, তাহলে আসি । —এসে বাবা । চিঠি দিও। —আপনি সাবধানে থাকবেন কিন্তু । এক রইলেন এখানে । দিনকাল বড় খারাপ পড়েছে ! —তা তো বটেই । —চিঠি দেবেন— —তোমরা আগে দিও। পেছন থেকে সুললিতা বলে উঠলো—ওগো, দেরি কোরো না। সাড়ে দশটা বাজে । ননীবালা ফিরে এসে ঘরে ঢুকে মেয়েকে কোলে তুলে নিলে। বল্লে-খুকী, ওরা চলে গেল । আমাদের ফেলে রেখে চলে গেল । কার কাছে ফেলে রেখে চলে গেল রে ? দেওয়ালে স্বামীর ফটোখানার দিকে চেয়ে ওর চোখ দুটি বেয়ে ঝরঝর করে জল পড়লো । এর মাস দুই পরে মেয়েকে নিয়ে ননী বাপের বাড়ি চলে এসেছিলো এবং সেই থেকেই এখানে আছে | আজ দশ বছর আগেকার কথা এসব । সৎমেয়ের কোনো চিঠিপত্র দেয় নি, কোনো খোজখবরও নেয় নি । সরবালা সেরে উঠলো না । সেই থেকে রোজ সন্ধ্যার সময় একটু একটু জর হয়। না আছে ওষুধ, না আছে পথ্যি । ননী যখন পরের বাড়ি কাজ করতে যায়, তখন সরবালা একাই বাড়িতে বিছানায় শুয়ে থাকে। কোনোদিন জর আসে, কোনোদিন আসে না। যেদিন ভালো থাকে, সেদিন কামার-বাড়ির হর আর মতি তার সঙ্গে কড়ি খেলতে আসে। যেদিন জর আসে কথা মুড়ি দিয়ে পড়ে থাকে। একাই শুয়ে থাকে । - ননী কিন্তু খুব শক্ত মেয়েমানুষ। কিছুতেই সে দমে না। সন্ধ্যাবেল ফিরে এসে সে বেটে কাটে রোজ। আগে বেটে কাটতে জানতো না, ক্রমে শিখে ফেললে । এক পোয়া থেকে দেড় পোয়া দড়ি কাটতে প্রথম প্রথম, ক্রমে এক সের পর্য্যস্ত কাটতে লাগলো। রাত দশটার মধ্যে এক সের দড়ি বেশ সরু করে কাটতে পারে। প্রকাশ গাঙ্গুলীর স্ত্রী একদিন এসে বলে, বেটে কাটছে মা ? বেশ বেশ । —শখিটি জ্যাঠাইমা । কিছু আয় করা তো চাই ।