পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ في الأ থাকতেন না। আমি, সীতা ও দাদা চোখ বুজতাম—মিস্ নটন ও তার সঙ্গিনী চোখ বুজতে। 'হে আমাদের স্বৰ্গস্থ পিতা সদাপ্রভু!—সবাই একসঙ্গে গম্ভীর সুরে আরম্ভ করলুম। হঠাৎ চোখ চেয়ে দেখতাম সবাই চোখ বুজে আছে, কেবল সীতা চোখ খুলে একবার জিব বার করেই আমার দিকে চেয়ে একটু দুষ্ট.মির হাসি হাসলে—পরক্ষণেই আবার প্রার্থনায় যোগ দিলে। সীতা ঐ রকম, ও কিছু মানে না, নিজের খেয়াল-খুশীতে থাকে, যাকে পছন্দ করবে তাকে খুবই পছন্দ করবে, আবার যাকে দেখতে পারবে না তার কিছুই ভাল দেখবে না। ওর সাহসও খুব, দাদা যা করতে সাহস করে না, এমন কি আমিও যা অনেক সময় করতে ইতস্ততঃ করি—ও তা নির্বিচারে করে । আমাদের বাংলো থেকে খানিকটা দূরে বনের মধ্যে একটা দেবস্থান আছে—পাহাড়ীদের ঠাকুর থাকে। একটা বড় সরল গাছের তলায় কতকগুলো পাথর—ওরা সেখানে মুরগী বলি দেয়, ঢাক বাজায়। সবাই বলে ওখানে ভূত আছে, জায়গাটা যেমন অন্ধকার তেমনি নির্জন—একবার দাদা তর্ক তুলে বললে আমরা কখনোই ওখানে একা যেতে পারবো না । আমি ভেবে উত্তর দেওয়ার আগেই সীতা বাংলোর বার হয়ে চ'লে গেল একাই—কোনো উত্তর না দিয়েই ছুট দিলে পাহাড়ীদের সেই নির্জন ঠাকুরতলার দিকে “ওই রকম ওর মেজাজ।••• 彎 মিস নর্টন সীতাকে খুব ভালবাসে । মাঝে মাঝে সীতাকে সঙ্গে নিয়ে যায় ওদের মিশন বাড়িতে, ওকে ছবির বই, পুতুল, কেক, বিস্কুট কত কি দেয়—ছবি আঁকতে শেখায়, বুনতে শেখায়—এরই মধ্যে সীতা বেশ পশমের ফুল তুলতে পারে, মানুষের মুখ, কুকুর আঁকতে পারে। ওরা আমাকেও অনেক বই দিয়েচে—মথি-লিখিত সুসমাচার, লুক-লিখিত সুসমাচার, যোহনলিখিত সুসমাচার, সদাপ্রভুর কাহিনী—আরো অনেক সব। যীশু একটুকরো মাছ ও আধখানা রুটিতে হাজার লোককে ভোজন করালেন—গল্পটা পড়ে একবার আমার হঠাৎ মাছ ও রুটি খাবার সাধ হ'ল। কিন্তু মাছ এখানে মেলে না—ম ভরসা দিলেন খাওয়াবেন, কিন্তু দু মাসের মধ্যেও সেবার মাছ পাওয়া গেল না; আমার শখও ক্রমে ক্রমে উবে গেল । বাবার বন্ধু দু-একজন বাঙালী মাঝে মাঝে আমাদের এখানে এসে দু-একদিন থাকেন। মেমের মাকে পড়াতে আসে, এ ব্যাপারটা তাদের মনঃপূত নর। বাবাকে তারা কেউ কেউ বলেছেনও এ নিয়ে । কিন্তু বাবা বলেন— ওরা আসে, এজন্তে এক পয়সা নেয় ন—অথচ সীতাকে ছবি আঁকা, সেলাইয়ের কাজ শেখাচ্ছে—কি ক'রে ওদের বলি তোমরা আর এসো না ? তা ছাড়া ওরা এলে মেয়েদের সময়ও ভালোই কাটে, ওদের কেউ সঙ্গী নেই, এই নির্জন চাবাগানের একপাশে পড়ে থাকে—একটা লোকের মুখ দেখতে পায় না, কথা বলবার মানুষ পায় না—ওরা যদি আসেই তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি কি ? মায়ের মনের একটা গোপন ইচ্ছা ছিল, সেটা কিন্তু পূর্ণ হয়নি। বাবা অত্যন্ত মদ খান —এবং যেদিন খুব বেশী ক'রে খেয়ে আসেন, সেদিন আমাদের বাংলো ছেড়ে পালাতে হয়। নইলে সবাইকে অত্যন্ত মারধোর করেন। সে সময়ে তাকে আমরা যমের মত ভয় করি—এক সীতা ছাড়া। সীতা আমাদের মত পালার না—চীঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে চায় না। সে বাংলোতে থাকে, বলে—মারবে বাবা ?-- না হয় মরে যাবে! —তা কি হবে ? রোজ এ রকম ছুটোছুটি করার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। বাবার এই ব্যাপারের জন্তে আমাদের সংসারে শাস্তি নেই—অথচ বাবা যখন প্রকৃতিস্থ থাকেন, তখন র্তার মত মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার— এত শান্ত মেজাজ । যখন যা চাই এনে দেন, কাছে ডেকে আদর করেন, নিয়ে খেলা করেন, বেড়াতে হান–কিন্তু মদ খেলেই একেবারে বদলে গিয়ে অন্ত মূৰ্ত্তি ধরেন, তখন বাংলো থেকে