পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 ૦ বিভূতি-রচনাবলী দিয়ে চেপে ধরলে— —না নীলি । তোমার আদ্ধেক আমার আদ্ধেক । এসো আমার সঙ্গে— অন্ধকার উঠোনে পা দিয়েই নালুটেচিয়ে উঠলোঁ—মাগো—কি এনেছি মা, মন্ত এক মাগুর মাছ—তার পরেই সে থমকে দাড়িয়ে গেল। কে একজন চমৎকার মেয়েমানুষ সেঞ্জেগুজে ওদের ঘরের ছোট বারানাতে বসে মায়ের সঙ্গে কথা বলছে । ওর মা বল্লে,—এদিকে এসো। দিদি এসেছেন, প্রণাম করে । তোমার মেজদিদি— নীলি পেছন থেকে জিগ্যেস করলে—কে উনি দিদি ? ননীবালা গৰ্ব্বের মুরে বল্লে,—আমার মেজ মেয়ে সীমা । তিনটে পাস । কলকাতার মেয়ে-ইস্কুলে কাজ করে । সোনার টুকরো মেয়ে । নালুকে নিতে এসেছে। বলছে, মা, আমার কাছে দাও, আমি নিয়ে গিয়ে ওকে লেখাপড়া শেখাবো । ছোট বোনটাকে এভাবে গায়ে ফেলে রাখতে দেবো না । তা আমি বলছি,—তোমাদের জিনিস তোমরা নিয়ে যাবে, আমার বলবার কি আছে! তোমরাই তো ওর অভিভাবক, আমি কি বুঝি, মুখু মা তোমাদের— সীমা উঠে এসে নালুকে জড়িয়ে ধরলে দু'হাত দিয়ে । ওর মা বল্পে—তোমার কাপড়ে কাদা লাগবে, বোসে মা সীমা, আমি আগে ওকে ধুইয়ে মুছিয়ে দিই। — সীমা বল্লে,—আমি দিচ্ছি। কেন, ও কি আমার বোন নয় ? কি চমৎকার দেখতে হয়েছে খুকী ! নাম কি বিচ্ছিরি রেখেছে মা ! সরবালা ! সরবালা আবার কি ? আমি নাম রাখবো শকুন্তল, কি সুন্দর চোখ দুটি । এক বছরের ছোট্ট খুকী দেখেছিলাম— সত্যি, আজ কি অদ্ভুত সকালটা হয়েছিল। কার মুখ দেখে উঠেছিল ননী তাই ভাবছে। বিকেলে সে পুকুর থেকে কাপড় কেচে এসেছে সবে, এমন সময় একখানি ঘোড়ারগাড়ি এসে ওর দরজার সামনে দাড়ালো। বেলা তখন আর নেই । ননী একদম চিনতে পারেনি। দশ বছর পরে সে দেখলে সীমাকে । উনিশ বছরের সীমার বয়েস আজ উনত্রিশ । চোথে আবার সোনা-বাধানো চশমা । সীমা রাতে কত কথা বল্পে। মুললিত দিদি মজঃফরপুরে থাকে তার স্বামীর কৰ্ম্মস্থলে । সীমা কলকাতার বোর্ডিংয়ে থেকে পড়েছে। বাবার ব্যাঙ্কে টাকা ছিল, ডাকঘরে টাকা ছিল, সব নিয়েছে বড়দি আর তার স্বামী । সীমা জানতে পেরে বলেছিল, তোমরা গরীব মাকে ফঁাকি দিলে । তার কি আছে ? তিনি র্তায় ছোট মেয়েটাকে কি করে মানুষ করবেন ? সুললিতা নাকি বলেছিল—যা, যা, বডড যুধিষ্টির তুমি ! সৎমা গেয়ো মেরে না হলে সেই আমাদের সব গপ পায় পুরতে কি না ? সৎমা, সংবোন কখনো আপন হয় না। সীমাকে খেতে দিয়ে ননী বল্লে,—কিছু খেতে দেবার ছিল না । ভাগ্যিস, মাগুর মাছটা এনেছিল নালু বিল থেকে ধরে ! বুঝলি নালু, তোর মাছ ধরা সাতোক হ’ল । সীমা পরদিন বিকেলে সরবালাকে নিয়ে নৌকোয় উঠলো। যাবার সময়ে বল্লে,—ম, আমি তোমাকে নিয়ে যাবো। বাসা ঠিক করি আগে । বাসাট ছোট । শকুন্তলার জন্তে ( এরই মধ্যেই সে নালুর নতুন নাম দিয়ে ফেলেছে) ভেবে না। ওকে গিয়েই ইস্কুলে ভৰ্ত্তি করে দেবো। জন্মাষ্টমীর ছুটিতে নিয়ে এসে দেখিয়ে যাবো একবার। ও যে আমার বাবার মেয়ে, তা আমি কি ভুলতে পারি মা ? পুজোর পর তোমাকেও যেতে হবে। রান্নার ডিপার্টমেন্ট তোমার হাতে তুলে দিয়ে আমরা দুই বোন লেখাপড়া নিয়ে থাকবো –কি বলিস শকুন্তলা ?