পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ Հ89 এক পাশে গোছানো। পূৰ্ণপাত্রে সিধে সাজানো, তামার টাটে নারায়ণশীলা ! সি দুর বেলপাতা তামার বড় থালায় । হোম হয়ে গিয়েছে, উপকরণের অবশেষ এদিক ওদিক ছড়ানো । ভৈরব চকত্তি বল্পেন—দেখলেন মাস্টারবাৰু ? হোম করার ফল আছে কি না দেখলেন । গোপীবাবু বল্লেন—আপনি অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাস করেন ? —নিশ্চয়ই। নিজের চোখে দেখা । অপদেবতার কাও দেখেছি যে কত । পঞ্চমুণ্ডির আসনে জপ করার সময় ! —বলুন না দু'একটা ঘটনা ? 等 —ন, সে-সব বলবে না। থাক গে। কিন্তু আজ এক বছরও হয়নি একটা অলৌকিক কাণ্ড দেখেছিলাম আমার এক যজমান-বাড়ি। সেইটাই বলি। একটু চা করতে বলি ? এমন সময় আবার কালে মেঘ করে বৃষ্টি শুরু হোল । অন্ধকার হয়ে এল চারিদিক । ঝড় উঠলো খুব ঠাণ্ড হাওয়ার। ছড়, ছড়, করে পাকা জাম পড়তে লাগল চকৃত্তি মশায়ের বাড়ির সামনের গাছটা থেকে । নতুন জলে ব্যাঙ ডাকতে লাগলে চারিদিকে । চ এল । আমরা ছাতি নিয়ে বেরুইনি । এই বৃষ্টি মাথায় করে যাবার উপায় নেই। বেশ জমিয়ে গল্প শুনবার জন্যে ভৈরব চক্ৰবৰ্ত্তীর মাটির দাওয়ায় মাদুরের ওপর বসে গেলাম । ভৈরব চক্রবর্তী আমাদের চা দিয়ে তামাক সেজে নিয়ে এলেন । তারপর শুরু করলেন গল্প বলতে : . আর বছর ভাদ্র মাসের কথা। এখনো বছর পোরেনি। আমার এক যজমান-বাড়ি থেকে খবর পেলাম তার একটি মেয়ের বড় অমুখ । আমাকে তার বাড়িতে গিয়ে বিরজা হোম করতে হবে মেয়েটির জন্তে । বিরজা হোমে পূর্ণ আহুতি দিলে শক্ত রুগী ভালো হয়ে যায়। আমি এমন সারিয়েছি । আমাকে তারা নৌকো করে নিয়ে গেল গোবরডাঙ্গা স্টেশন থেকে যমুনা নদীর ওপর দিয়ে। অজ পাড়াগা। ঘরকতক ব্রাহ্মণ ও বেশির ভাগ গোয়ালা ও বুনোদের বাস। যমুনার ধারেই গ্রাম । গ্রামের মেয়েরা নদীর ঘাটেই স্নান করতে আসে । —গ্রামের নাম কি ? —সাতবেড়ে । তারপর শুনুন । গ্রামে গিয়ে পৌছুলম বিকেলে। খুব বন-জঙ্গল গ্রামের মধ্যে । একটা ভাঙা শিবমন্দির আছে, সেকেলে ছোট ইটের তৈরি । মন্দিরের মাথায় বট অশ্বখের গাছ গজিয়েছে। প্রকাণ্ড বড় একটা শিবলিঙ্গ বসানো মন্দিরের মধ্যে, চামচিকের নাদিতে আকণ্ঠ ডোবা অবস্থায় । পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহুদিন আগেই। এই সময় আমাদের জন্তে ভৈরব চক্রবত্তীর বড় মেয়ে শৈল চালভাজা ও ছোলাভাজা নিয়ে এলো তেলমুন মেখে । ভৈরব চক্ৰবৰ্ত্তী বিপত্নীক, তার মেয়েটি শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে সবে ক'দিন হোল, চলে গেলে চক্ৰবৰ্ত্তী মশাই নিজেই রান্না করে খান । আমরা সকলেই থাবার খেতে আরম্ভ করে দিলাম। ভৈরব চক্ৰবৰ্ত্তীও সেই সঙ্গে । এখনও দিব্যি দাতের জোর, ওই বয়সে এমন চাল-ছোলাভাজা যে খেতে পারে, তার বহুদিনেও দাত নষ্ট হবে না । তিনি খেতে খেতেই বলে চল্লেন--এই শিবমন্দিরটার কথা মনে রাখবেন, এর সঙ্গে আমার গল্পের সম্পর্ক আছে। তারপর আমরা গিয়ে সে বাড়ি উঠে হাত-পা ধুয়ে জল খেয়ে ঠাণ্ডা হবার পর গৃহস্বামী একটি ঘরে আমায় নিয়ে গেলেন। অমুস্থ মেয়েটি সেই ঘরে শুয়ে আছে। বয়েস তেরো-চোদ হবে, নিতান্ত রোগা নয়, বেশ মোটালোটা ছিল বোঝা যায়—গলায় একরাশ