পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ Հ8d: আর ঘি । আমি একাই রণধছি, রান্নার সময় কাছে কেউ থাকে আমি পছন্দ করিনে। রান্নার আগে একবার চা করে খেলাম। পরের তৈরি চা খেয়ে তৃপ্তি পাইনে। রান্না করতে রাত হয়ে গেল। রাত সম্পূর্ণ অন্ধকার। একটু জিরিয়ে তামাক খেয়ে নিয়ে ভাত বেড়ে নিলাম হাড়ি থেকে আঙট-কলার পাতে। তারপর খেতে বসবার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হোল ছাদে আমি একা নেই । এদিক ওদিক চাইলাম, কেউ কোথাও নেই, রাত বেশি হয়েছে, বাড়ির লোকও নিচের তলায় খেয়েদেয়ে শুয়েছে, গ্রামই নিযুত হয়ে গিয়েছে। কেবল যমুনা নদীতে জেলেদের আলোয় মাছ ধরার ঠুক ঠুক্‌ শব্দ হচ্ছিল। হঠাৎ খেতে খেতে মুখ তুলে চাইলাম । আমার সামনে ছাদের ধারে ওটা কি গাছ ? ক’লে৷ মত, লম্ব তাল গাছের মত ? এতক্ষণ ছাদে বসে রান্না-বাড়া করছি, কই অত বড় একটা গাছ নজরে পড়েনি তো এর আগে ? ছিল নিশ্চয়ই, নয়তো এখন দেখছি কি করে। কি গাছ ওটা ! সত্যি, যখন চা থেলাম, তখন দুটে৷ বাড়ির মধ্যেকার ওই রাস্তাটা দিয়ে একখানা গরুরগাড়ির র্ক্যাচ ক্যাচ শব্দে আমাকে ওদিকে তাকাতে হয়েছিল। তখন, কই তো অত বড একটা তাল গাছ—উহু, কই ! না, দেখিনি । কিন্তু তাল গাছটা এমনভাবে—ও কি রকম তাল গাছ ? ওকি ! ওকি ! আমি ততক্ষণ বিভীষিকা দেখে ভাত ফেলে উঠে পড়েছি । তাল গাছ না । এখনো ভাবলে—এই দেখুন গায়ে কাটা দিয়েছে। যদিও আমার নাম ভৈরব চক্কত্তি, তান্ত্রিক । পিছনের ছাদের কার্নিসের ওপর দাড়িয়ে এক বিরাটকায় অম্বর কিংবা দৈত্যের মত মূৰ্ত্তি, তার তত বড় বড় হাত প-সেই মাপে। মাথাটা একটা ঢাকাই জালার মত, চোখ দুটাে আগুনের ভাটার মত রাঙা, আগুন ঠিকরে পড়ছে! আমার দিকেই তাকিয়ে আছে অমুরট, যেন আমাকে জালিয়ে ভস্ম করে ফেলবে। বিরাট মূৰ্ত্তি। তালগাছের মতই লম্বা। অনেক উচুতে তার মাথাট। নিচু চোখে সেট। আমার দিকে চেয়ে আছে। ভালো করে চেয়ে চেয়ে দেখলাম। দু'ছবার চোখ রগড়ালাম। দুবার চা খেয়ে কি এমন হোল ? না। ওই তো সেই বিরাট, তাল শাল নারকোল গাছের মত তে-ঢ্যাঙা বেখাপ্পা অপদেবতার মূৰ্ত্তি বিরাজ করছে সামনে জমাট অন্ধকারের মতো। এবার ভালো করে দেখে মনে হোল পিছনের ছাদে সেটা দাড়িয়ে নয়, কোথাও দাড়িয়ে নেই—দুই বাড়ির মধ্যেকার ফাকটাতে দাড়িয়ে বলা যায়! কারণ ওই জীবের নাভিদেশ থেকে ওপর পর্য্যন্ত আমার সামনে । তার নিচেকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমার দৃষ্টিরেখার নিচে। এ বর্ণনা করতে যত সময় লাগলো, অতটা সময় লাগেনি আমার বারকয়েক দেখতে জীবটাকে । এক থেকে দশ গুনতে যত সময় লাগে, ব্যস। আমি বলতে পারি অন্ত যে কেউ ওই বিকট অপদেবতার মূৰ্ত্তি অন্ধকারে নির্জনে ছাদে গভীর রাতে দেখলে আর গোলার ধানের ভাত খেতে না পরদিন । - আমি অপদেবতা দেখেছি, পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসলে জপের শেষের দিকে প্রায়ই ভয় দেখাতো। কিন্তু সে এ ধরনের বিকট ও বিরাট ব্যাপার নয়। ভয় পেয়ে গেলাম। ঠক্ ঠক্‌ করে কাপতে লাগলাম। চক্ষে অন্ধকার দেখে পড়ে যাই আর কি। পড়লেই হয়ে যেতো। দুর্বল মানুষ মরে ওদের হাতে। মন সবল হোলে ওরাই পালায় । নিজেকে তখুনি সামলে নিলাম। তারামন্ত্র জপ শুরু করলাম জোরে জোরে। সেই দিকে