পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ミQ○ দাড়িয়ে আছে—এপার থেকে যারা এসেছে তাদের গাড়ি । ষাড়া ঝোপ ঘেরা মাঠের বাইরে দোকান বসেচে.মুড়িমুড়কি, ফুলুরি, কাটিভাজা, ছোলাভাজা । পি-পি বাশি বাজচে ছোট ছেলেমেয়েদের মুখে...খেলনা বিক্রি হচ্ছে। মাটির ছোবা, পুতুল, রাধাকেষ্ট, শিবঠাকুর, ঘোড়–মণিহারি দোকানে ক্লিতে, কাচের চুড়ি, চিরুনি বিক্রি হচ্ছে •••দু'তিনথানা দোকানে পাপর ভাজা হচ্চে । তেমনি খদ্দেরের ভিড়—বেশির ভাগ ছোট ছেলেমেয়ে আর গরুর গাড়ির গাড়োয়ানেরা । আশপাশের গ্রাম থেকেও অনেক ঝি-বেী বিনা কারণেই পুজো দেখতে.এসেচে হাজরাতলায় । বেলা দুপুর ঘুরে গিয়েচে । পুজোর বাজনা বেজে উঠলো। পুরুতঠাকুর বল্লেন—যাও মা-ঠাকুরুণরা স্নান করে এসে ভিজে কাপড়ে সব হাজরাতলায় আঁচল বিছিয়ে বসো— কলকাতার বৌটি আর পাচুদাসী একসঙ্গে নেয়ে উঠলো নদী থেকে। এক নিঃশ্বাসে ডুব দিতে হবে, উত্তর মুখ হয়ে হাজরা ঠাকুরের উদ্দেশে প্রণাম করতে হবে । মন-জু-লা চুপি চুপি বল্লে—ভাই, আমার বুক কঁপিচে । —কেন দিদি ? —আমার বড় সাধ—তোমাকে বলচি ভাই । বুকখান হুহু করে মাঝে মাঝে । আমার সঙ্গে আমার সমবয়সী যাদের বিয়ে হয়েছিল, সবার একটি দুটি সন্তান হয়ে গিয়েচে—ওঁর মনে বড় ক৪— —বাবার দয়া দিদি ৷ হয়ে যাবে, চলে শীগগির করে যাই— পাচুদাসীর বড় মায়া হয় বৌটির ওপর । কি চমৎকার মানিয়েছে ওকে নীল রং-এর ফুল তোলা ভিজে শাড়ি পরে দু'দণ্ড চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে । অনেকেই চেয়ে চেয়ে দেখছিলও ওকে সুন্দরী বটে. পাড়াগায়ের হাটে-মাঠে আমন সুন্দরী মেয়ে চক্ষে পড়ে কখনো ? আহা, মোমের গড়ন হাত দুটি কখনো কি গোবরের ঝুড়ি ধরতে পারবে ? গড়ে ধান ভেনে দিতে পারবে —আঙুল ছেচে যাবে তা হোলে । ও-হাত ধান ভেনে দেওয়ার জন্তে তৈরি হয়নি। অন্তত: পচিশ-ত্রিশ জন বেী, সবাই তরুণী, ভিজে কাপড়ে সারি বেঁধে হাজরাতলায় দাড়িয়ে । পুরুতঠাকুর সকলের মাথায় কুশিতে করে জলের ছিটে দিয়ে বল্লেন—যাও সব মায়ের, এইবার আঁচল পেতে বসো গে— একজন বল্লে—কতক্ষণ বসে থাকবো বাবাঠাকুর ? —চোখ বুজে বসবে সবাই। যতক্ষণ না আঁচলে কিছু পড়ে ততক্ষণ বসবে মা তোমরা। চোথ চেও না কেউ, আসন ছেড়ে উঠে পড়ে না যেন অধৈৰ্য্য হয়ে । চৈত্র মাসের খর রোদে মাঠ তেতে উঠেচে–বাতাস যেন আগুনের হলকা, তবুও হাজরাতলায় বেশ ছায়া আছে তাই রক্ষে–পাচুদাসীর জলতেষ্টা পেয়েচে । জল খাওয়ার কথা এখন ভাবতে নেই। বুড়ে হাজরা দয়া করুন । ঢোল বাগুচে কঁসি বাজচে । ট্যাং ট্যাং ট্যাং— কাইনান, কাইনান,“ন, ও সব ভাবতে নেই’’হাজরাঠাকুর অপরাধ যেন না নেন। পাচুদাসী আবার মনকে স্থির করবার চেষ্টা করল। - কৃতক্ষণ কেটে গেল । পাচুদাসী এর মধ্যে বার তিনেক চোখ চেয়ে দেখেচে । আশপাশে হাজরাঠাকুরের কোন মন্দির বা মূৰ্ত্তি নেই। একটা মন্তবড় ষাড়া গাছ অনেকদূর জুড়ে ডালপালা ছড়িয়ে দাড়িয়ে আছে । তলায় ছড়িয়ে পড়া শুকনো পাতার উপর তরুণী বৌয়ের দল চোখ বুজে ནོ།Sག বিছিয়ে