পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

❖ ዕ8 বিভূতি-রচনাবলী বসে.-কোনো লোক নেই এদিকে “পুরুতষ্ঠাকুর রয়েছেন দূরে ও গাছের তলায় পুজোর জায়গায়। ও ভাল করে চেয়ে দেখলে গাছতলায় একখানা সিদ্বর মাখানে ইট পৰ্য্যন্ত নেই। পাচুদাসী আবার চোখ বুজলো। হঠাৎ ওদের সারিতে একটি বউ অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো—আমার আঁচলে একটা কি পড়লো ! পাশের একজন উপদেশ দিল—চোখ চেয়ে স্থাখে না কি ! একটা ষাড়া ফল । বৌটি সারি থেকে উঠে চলে গেল পুরুতষ্ঠাকুরের কাছে, যেখানে পুজো হচ্চে। সৰ্ব্বাঙ্গ শিউরে উঠলো পাচুদাসীর এবং সঙ্গে সঙ্গে ওর বুকও কেঁপে উঠলো। কি জানি ভাগ্যে কি আছে! আরও দুটি বৌ সারি থেকে উঠে চলে গেল—একজনের ফুল আর একজনের ফল পড়েচে । ইতিমধ্যে আর একজন কেঁদে উঠলে ডুকরে। সবাই বল্লে—কি হোল গে, কি হোল ? —আমার আঁচলে চুল আর ঢিল পড়েছে গো। পোড়া কপাল গো ! সে কাদতে কঁদিতে উঠে চলে গেল সারি থেকে । বুড়ে হাজরা নিষ্ঠুর, দয়া করলেন না তার উপর। কি অপরাধ হোল বাবার চরণে পাচুদাসীর বুক কেঁপে ওঠে আবার । বুকের ভেতর যেন টেকির পাড় পড়ছে। একটা বোঁ টিপচিপ করে মাথা কুটছে মাটিতে ওর সারিতে। ওর আঁচলেও তাহলে চুল আর ছাই পড়েছে। দয়া করে বাবা হাজরা, বুড়ে হাজরা দয়া করে। ! বেলা ঘুরে গিয়েছে। আরও কতক্ষণ কাটলো। হঠাৎ পাচুদাসীর বুকের স্পন্ন যেন বন্ধ হবার উপক্রম হোল । টপ করে একটা কি পড়লে ওর আঁচলে! ফল । ষাড়া ফল ? চুল বা ছাই পড়বার শব্দ কি অমন ! ঢ়িল । •••বাবা হাজরাঠাকুর! সবাই মিলে ব্যাং নদীর খেয়া পার হচ্ছে। উদ্ধব দাস স্ত্রীকে বল্লে—তুই কি পেলি ? পাচুদাসী বল্লে—ফল, একটা ষাড়া ফল । হাজরাঠাকুরের দয়া গো— ওর মন ভালো না । ম-ন-জুলা ফিরে গিয়েছে আগের খেয়ায় ও পেয়েছিল জটপাকানো চুলের মুড়ি । পুরুতষ্ঠাকুর আর একবার বসতে বলেছিলেন আঁচল পেতে। আবারও সেই চুলই পড়েছে তার আঁচলে । পুরুত্ঠাকুর বলেছেন—ম, আমি কি করবে, আমার ওতে হাত নেই। তোমার অদৃষ্টে সন্তান থাকলে ফুল-ফলই পড়তো—বাড়ি ফিরে যাও মা—কি করবো বলে— ম-ন-জুলার কান্না দেখে ওর নিজের চোখে জল এসেছিল । সত্যি, কত আশা করে এসেছিল! হাজরাঠাকুর কি করবেন ? যা অদৃষ্টে আছে তাই তিনি বলে দেবেন মাত্র। বেচারী ম-ন-জুলা ! অত টাকা ওদের ! সুর্য্য অস্ত যাচ্ছে ব্যাং নদীর পশ্চিম গায়ে বনজাম আর হিজল আর বেত ঝোপের আড়ালে । পাচুদাসীর মন আনন্দে ভরে উঠলে হঠাৎ । খোকা আসছে, হাতে তার বীজবেগুন, কত ক্ষেতে ক্ষেতে শক্ত হাতে সে লাঙ্গল দেবে, বেগুনের চারা তুলে পুতবে হাপর থেকে, সোনা ফলাবে মাটির বুকে । বুড়ো হাজরা বলবার আগে স্বপ্ন দেখেছে তার আসবার। সে আসচে।